শিরোনাম :
শিল্পায়নে উদ্বাস্ত হচ্ছে লবণ ও পান চাষী : হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা মহেশখালী কলেজে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন ছাত্র ও অভিভাবকদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত, মহেশখালীর কালারমারছড়ার জলদস্যু সরদার হাসান নুরী গ্রেফতার কক্সবাজারে ট্যুরিজম এন্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ইসলামী শ্রমনীতি ব্যতীত শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়-আব্দুল্লাহ আল ফারুক ছাত্র জনতার বিজয়ের মাধ্যমে মানবতার বিজয় সুচিত- মুহাম্মদ শাহজাহান পেকুয়ায় বিরোধীয় জায়গায় স্হাপনা নির্মাণকে কেন্দ্র করে হামলাঃ আহত ৬ কৈয়ারবিল ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি অভিযোগ কক্সবাজার শিশু সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম এর সাধারণ সভা আজ সে ভয়াল ২৯ এপ্রিল:উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর দিন

আজ সে ভয়াল ২৯ এপ্রিল:উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর দিন

নিউজ রুম / ১৯ বার পড়ছে
আপলোড : বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

সাকলাইন আলিফ :

আজ সে ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। আজকের দিনটি উপকূলবাসীর কাছে বেদনার দিন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি সহ নানা কারণে বাড়ছে উপকূলে ঝুঁকি। এখনো খোলা রয়েছে বেড়ীবাঁধ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে নতুনভাবে বাঁধের ডিজাইন করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ উপকূলের ঘরে ঘরে কান্নার রোল বয়ে যাবে। উপকূলবাসী স্মরণ সভা, কোরআন খানি ও মিলাদ মাহফিল করার পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে , কক্সবাজার সহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে  এক সুপার সাইক্লোন আঘাত হানে। ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় উপকূল। সরকারি হিসেবে ২লাখ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ১০ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয়। প্রায় ১০ লাখ গবাদি পশু মারা যায়।  তবে বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা আরো বেশি বলে জানিয়েছেন

কোস্টাল  জার্নালিস্ট  ফোরাম অব  বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট  মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান। তিনি বলেন,জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় খরতা বেড়ে গেছে। পারাবান ও গাছপালা  নিধনের ফলে এই অবস্থা তিনি আরও বলেন  সেই সাথে  হাজার হাজার  একর প্যারাবন নিধনের করে  প্রাকৃতিক  সবুজ বেড়ীবাঁধ ধ্বংস করায় ২৯ এপ্রিলের  চাইতেও  উপকূলবাসীকে ভয়াবহ  পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

 আতা উল্লাহ খান বলেন,ঐ রাতের তাণ্ডবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠে উপকূলের বাসিন্দারা।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার উপকূলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল  মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নে। এখানে প্রতিটি ঘর থেকেই মারা গেছে লোকজন। এই এলাকার ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বাসি বলেন, সে রাতে আমি নিজেও ভেসে গিয়েছিলাম। আমার এলাকায় এখনো অরক্ষিত। ধলঘাটাতে এখন ৩৩ হাজার মানুষের বসতি। অনেক মানুষ এলাকার ছেড়ে চলে গেছে। আমরা এখনো রয়ে গেছি। এই বর্ষা মৌসুমে আমাদের অরক্ষিত বেড়ীবাঁধ সংস্কার না করলে এখানে হয়তো জনবসতি ও থাকবে না। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের নিকট আমার এলাকাটি রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।

ধলঘাটার সরইতলা এলাকার গৃহবধূ আফরোজা বেগম বলেন, সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনো ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার মা বাবা বোন সহ পরিবারের ১৯ জন সদস্য মারা যায়। যাদের অধিকাংশের কোন লাশ পাওয়া যায়নি। ২৯ এপ্রিল আসলে আমরা কান্না ধরে রাখতে পারি না। আজ আমাদের ঘরে নিহত স্বজনদের জন্য ফাতিহার আয়োজন করা হয়েছে।

মহেশখালীর ধলঘাটা তরুণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রতিবছরের মত এবারও ২৯ এপ্রিল নিহতদের স্মরণে মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খানি অনুষ্ঠিত হবে।

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার খুদিয়ার টেক এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহমদ বলেন, সেই রাতের গরকির চুবলে ছেলে হারায় মাকে, মা হারায় তার প্রিয় সন্তানকে। আমার পরিবারের ১৫ জন সদস্য চোখের সামনেই ভেসে গিয়ে প্রাণ হারায়। এই স্মৃতি কোনদিন ভুলতে পারবো না।

কুতুবদিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহারিয়ার চৌধুরী বলেন, সে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ৩৪ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো অরক্ষিত উপকূল। সেই সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। দিন দিন বেডেই চলছে সাগরের পানির উচ্চতা। উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ পড়েছে হুমকিতে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস বেড়ে গেছে অনেক। ফলে উপকূলের বাসিন্দাদের ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

কুতুবদিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন , কুতুবদিয়াতে এখনো ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পন্ন খোলা, পুরো কুতুবদিয়া আজ অরক্ষিত। জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা অসহায়। তাই দ্রুত বেড়ীবাঁধ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলছে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশে নানা পরিবর্তন ঘটেছে। বেড়ে গেছে ঝড় ঝলোউচ্ছ্বাস। ফলে দিনদিন ঝুঁকির মাত্রা বেড়েই চলছে।

কক্সবাজার ২ (মহেশখালী কুতুবদিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমি সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় সংসদীয় টিমকে মহেশখালী কুতুবদিয়া নিয়ে গিয়ে বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করছে। পানি সম্পদ উপদেষ্টার কাছে আমি লিখিত আবেদন করেছি। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি, যেন বর্ষার আগেই বেড়ীবাঁধ সংস্কার করা হয়। সাগরের করাল গ্রাস থেকে কক্সবাজার উপকূলের মানুষদের রক্ষাকবচ বেড়ীবাঁধ কে টেকসই করতে হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের ৫৯৬ কিলোমিটার বেরিবাদের মধ্যে প্রায় ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খোলা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে আরো ৫০ কিলোমিটারের মত। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সংস্কারের জন্য অগ্রগতি ও হয়েছে বলে জানান তিনি।

নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের চেয়ে উচ্চতা এবং পাশে বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের প্রতি জেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধা রয়েছে। জেলা প্রশাসন আজকের দিনে সরকারিভাবে কোন আয়োজন না করলেও বেসরকারিভাবে পুরো জেলায় নিহতদের স্মরণে নানা আয়োজন থাকবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিশেষ করে মহেশখালী এবং কুতুবদিয়াতে আয়োজন থাকছে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলে দিনদিন ঝুঁকি বেড়েই চলছে। তাই এ ব্যাপারে পরিবেশ বান্ধব টেকসই পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর