বিডি প্রতিবেদক :
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামী মৌলভী জকোরীয়া (৫৩) চট্টগ্রাম কারাগারে মারা গেছেন।
শনিবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৌলভী জকোরিয়া উখিয়ার কুতুপাংয়ের ক্যাম্প-১ ইস্টের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
কক্সবাজার কারাগারের জেলার কামাল উদ্দিন জানান, জকোরিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার ১৪ নং আসামী। তাকে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে কারাগারে প্রাথমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাকে কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।
এরআগে, ১১ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আসামীদের বিচার শুরু হয়েছে। এরআগে ১৩ জুন ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ।
রোববার দুপুরে সেই চার্জশীট আমলে নিয়ে বিচার কাজ শুরু আদেশ দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল।
মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় ভুমিকা ছিল। ঘটনার পর ১৫ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
সাড়ে আট মাস তদন্তের পর ওইদিন দুপুরে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট আদালতের ডকেট শাখায় জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিন।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্তরা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
এরপর তার ভাই হাবিবুল্লাহ মামলা করেন। তাতে অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি হামলাকারী কয়েকজনকে চেনার কথা সাংবাদিকদের জানালেও মামলায় আসামির তালিকায় কারও নাম দেওয়া হয়নি।
মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গার অধিকাংশই রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে। কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সম্প্রতি নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার চার বছর আগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।
রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে পরিচিত মুহিবুল্লাহ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন। জেনিভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন তিনি।
মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।