বিডি প্রতিবেদক :
“মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার সংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয় স্তরে। এ বছর সহ পরপর তিনবার বাংলাদেশ মানব পাচার সংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদনে তার এই অবস্থান সুরক্ষিত করেছে। এ সাফল্য অর্জনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনের সকল কর্মকান্ড সমন্বয় করাসহ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।”
মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ বাস্তবায়ন ও হালনাগাদকরণ বিষয়ক বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মো: আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
রবিবার কক্সবাজারের হোটেল ওশান প্যারাডাইজ ও রিসোর্টে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ইউন্রক ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত কর্মশালায় তিনি আরো বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মানুষ পাচারকারীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, তা নিরসনেও কার্যকর কর্মসূচির প্রয়োজন। এই বিবেচনা থেকেই, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮- ২০২২ প্রণয়ন করেছে। এটি এমন একটি দলিল, যেখানে সকল ধরনের মানব পাচার বিরোধী কর্মকান্ডের রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
‘ফাইট স্লেভারী অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন-পারসনস্ (এফএসটিআইপি) অ্যাকটিভিটি’র কারিগরি সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সার্বিক তত্ত্ববধানে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি আরো বলেন, এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য নানাবিধ টার্গেট পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে মানব পাচার প্রতিরোধ করা জরুরী। তিনি মানব পাচারকে আধুনিক দাসত্ব এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটিগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কাজ করার আহŸান জানান। একইসাথে তিনি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮- ২০২২ এর নির্দেশনাগুলো মেনে চলারও পরামর্শ দেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ( এডিএম) আবু সুফিয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠবত কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দীন বলেন, কক্সবাজার, খাগড়াছাড়ি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলাগুলো সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারত ও মালেয়শিংা কাজের উদ্দেশ্যে চলে যায়। তারা সে¦চ্ছায় সেখানে যায় তাই কেউ অভিযোগ করে না। কিন্তু যখন ভারতে ও মায়ানমারে গিয়ে তারা বিপদে পড়েন তখন মামলা করে। মামলা হলেই আমরা কেবল জানতে পারি। তিনি মানব পাচার প্রতিরোধে স্কুলের পাঠ্যক্রমে এ বিষয়ক একটি অধ্যায় অর্ন্তভুক্ত করা সহ বিভিন্ন সচেনতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব এ কে এম মুখলেছুর রহমান (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ)। শুভেচ্ছা বক্তব্যে উইন্রক ইন্টারন্যাশনাল’র ফাইট স্লেভারী অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন-পারসনস্ (এফএসটিআইপি) অ্যাকটিভিটি’র চীফ অব পার্টি মিস লিসবেথ জোনাভেল্ড জাতীয় কর্মপরিকল্পনার পটভুমি উপস্থাপন করেন। কর্মশালার উদ্দেশ্য ও কার্যপত্র ও মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ এবং কক্সবাজার পরিস্থিতি বিষয়ক একটি বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনা তুলে ধরেন ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশীদ, বান্দরবন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াসসহ অন্যান্যেরা।
এছাড়া কর্মশালায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জাতিসংঘ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিও প্রতিনিধি, স্থানীয় সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।