উখিয়ায় সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ – শত বছরের যোগাযোগ ভোগান্তির অবসান

নিউজ রুম / ১৪ বার পড়ছে
আপলোড : রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

আহমদ নেছার বাঙ্গালী :

শত বছর পুর্বে বৃটিশ আমলে কাঁচা সড়ক নির্মান করা হলেও একটি ব্রিজের অভাবে পিছিয়ে ছিল বিশাল এলাকার মানুষ। উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ‘কালা চাঁন সিকদার’ সড়কে দরগা পালং ও টাই পালংয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রেজু খালের উপর ব্রিজ নির্মাণে গণমানুষের প্রানের দাবী ছিল। অবশেষে সেই কাঙ্খিত ব্রিজ নির্মাণ করে যোগাযোগের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এতে শত বছরের যোগাযোগ ভোগান্তির অবসান হয়েছে। পাশাপাশি কালা চাঁন সিকদার সড়কটিও পিচঢালা করা হয়েছে। সড়কের পাশে নির্মান করা হয়েছে গাইডওয়াল। এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের সাভাবিক চলাচল সহজ হওয়ার পাশাপাশি মালামাল পরিবহনে সহায়ক হয়েছে।

তথ্যমতে, এ সড়ক ও ব্রিজ দিয়ে উখিয়া উপজেলার দরগাহ বিল, দরগাহ পালং, টাইপালং, ডেইল পাড়া, হাতি মুড়া, লম্বা ঘোনা, শৈলের ডেবা, ডিগলিয়া পালং, চাকবৈঠা, গয়ালমারা, আমতলী, ভালুকিয়া, পাতাবাড়ী, তুলাতুলি ও পার্বত্য ঘুমধুম সহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করছে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্প (ইএমসিআরপি) এর আওতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে এলজিইডি। একইভাবে ইএমসিআরপি’র আওতায় কক্সবাজারে ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ২৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

স্থানিয়রা জানান, উখিয়া বড়–য়া সম্প্রদায়ের সাথে ঐতিহ্যবাহী রামুর বড়–য়া সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ মন্দিরের সাথে যোগাযোগের জন্য শত বছর পুর্বে বৃটিশ সরকার আমলে বড়–য়া সম্প্রদায়ের তৎকালীন এক জমিদার একটি কাচাঁ সড়ক নির্মান করেন। যা ‘কালা চাঁন সিকদার’ সড়ক নামে পরিচিত। কালা চাঁন সিকদার সড়কটি নির্মানের পর থেকে তেমন উন্নয়ন যেমন হয়নি তেমনি একটি ব্রিজের অভাবে ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের ভোগান্তি ছিল। দরগা পালং ও টাই পালংয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রেজু খাল পারাপারে বাঁশের সাঁকোই ছিল ব্যবস্থ্যা। উখিয়া উপজেলা শহরে যাতায়তে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতো শিক্ষার্থী সহ সকলে। ঘটত ছোটখাটো দুর্ঘটনা। যানবাহন পারাপার করতে না পারায় পায়ে হেটে যাতায়ত করতে হতো। কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহ মালামাল পরিবহনেও কষ্টের সীমা ছিলনা। অবশেষে সেই কাঙ্খিত ব্রিজ নির্মান করা হয়েছে। পাশাপাশি গাইডওয়ালসহ পিচঢালা টেকসই সড়ক নির্মান করা হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের সাভাবিক চলাচল ও মালামাল পরিবহনে সহজ হয়েছে। এতে শত বছরের যোগাযোগ ভোগান্তির অবসান হয়েছে। ওই এলাকায় নির্মান করা হয়েছে বিদ্যালয় কাম দুর্যোগ আশ্রয়ণ কেন্দ্রও।
সরেজমিন গিয়ে দেখাযায়, একইভাবে ‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্প (ইএমসিআরপি) এর আওতায় উখিয়া-টেকনাফে আরো অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এসব অবকাঠামো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন সামাজিক সেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষাসহ স্থানীয় জনসাধারণ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত উপকার হয়েছে বলে মনে করেন স্থানিয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান বলেন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উখিয়া-টেকনাফের সীমিত সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের অনুদান সহায়তায় ‘ইএমসিআরপি’ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন সেবা সুবিধা সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সেবা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নে উক্ত কালা চাঁন সিকদার সড়ক ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মান করা হয়েছে।
কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ইএমসিআরপি প্রকল্প কর্তৃক গৃহীত সেবা সুবিধা সহায়ক নির্মিত অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে ৫০টি বিদ্যালয় কাম দুর্যোগ আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণ, ৩৪টি বহুমুখী কমিউনিটি ও সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ, ২৩৭.৩৮ কি:মি: রাস্তা উন্নয়ন, মাঠ পর্যায়ের ১টি অফিসের সংস্কার সহ সম্প্রসারণ, ৪২.১৫ কি:মি: রাস্তা মজবুত ও প্রশস্তকরণ, আড়াই কি:মি: অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ফুটপাথ, ড্রেনেজ সুবিধা নির্মাণ এবং পার্শ্ব- ঢাল সুরক্ষা, ৩৭১ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তার পাশে ২০০০ মিটার ড্রেন নির্মাণ, ৬টি হাট বাজারের উন্নযন, ১টি ত্রাণ প্রশাসন ও বিতরণ কেন্দ্র নির্মাণ, ৪০০০টি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন, ৯৭৫টি বজ্র নিরোধক সুরক্ষা সিস্টেম স্থাপন, ২০ কি:মি: রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ, ২৬৫ মিটার রাবার ড্যাম নির্মাণ এবং উন্নয়ন, ১৫৫০ মিটার জেটি উন্নয়ন, ১০০টি সোলার পিডি ন্যানো গ্রিড স্থাপন, উখিয়া ও টেকনাফে ২টি ফায়ার সার্ভিস অফিসের উন্নয়ন, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে ১টি ভবন নির্মাণ, কক্সবাজার এলজিইডি ভবনের উন্নয়ন, কক্সবাজার এলজিইডির জন্য ১টি প্রশিক্ষণ সুবিধা নির্মাণ। এছাড়াও ইএমসিআরপি প্রকল্পের অধীনে গভীর নলকূপ স্থাপন, পানির রিজার্ভায়ার নির্মাণ, ওয়াটার পয়েন্ট নির্মাণ, পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তন।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর