মুকুল কান্তি দাশ:
গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে মৃত জেলিফিশ। বক্স প্রজাতির মৃত জেলি ফিশ গুলুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত না হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরে অতিরিক্ত গরমের কারণে এসব জেলিফিশের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের। লাবনী পয়েন্ট থেকে অনেকগুলো মৃত জেলেফিশ সরিয়ে ফেলেছে টুরিস্ট পুলিশ। গত দু’একদিন ধরে ঢেউয়ের তোডে ভেসে আসা জেলিফিস গুলোর মৃত্যুর কারন জানতে উঠে পড়ে লেগেছে বিজ্ঞানিরা। নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গবেষণাগারে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে দেখা যায় অসংখ্য মৃত জেলি ফিস। যা কয়েকদিন ধরে ঢেউয়ের তোডে ভেসে বালিয়াডীতে মৃত পড়ে আছে। বেশ কয়েকদিন ধরে সমুদ্র পাড়ে দেখা মিলছে মৃুত জেলি ফিশের। দরিয়া নগর থেকে হিমছডি পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা মৃত জেলি ফিসের মিছিলটি বেশ ভারী। এসব জেলি ফিশের একেকটির ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি।
এবিষয়ে দরিয়ানগরের জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, সাগর পাড়ে একসাথে এত জেলি ফিসের মৃত্যু আগে দেখেননি। এবারই প্রথম এমনটা হয়েছে।
এদিকে সমুদ্র গবেষনা ইনস্টিটিউটর বিজ্ঞানী আবু সাইদ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেডে গেলে কম লবণাক্ততার জায়গায় জেলেফিস উপকূলে চলে আসতেই আটকে পড়ে বালুতে। তখন মরে যায়।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘিদিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। হঠাৎ করেই অনেক ট্রলার মাছ ধরতে গেছে। তাদের জালে আটকেও অনেক জেলিফিস মারা গেছে হয়ত। তবে মঙ্গলবার রাতে মৃত ভেসে আসা জেলি ফিসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষনার পরই মৃত্যুর কারন নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন সমুদ্র দূষণ বা অন্যকোন কারণ আছে কিনা তাও গবেষণায় উঠে আসবে।
বৃহস্পতিবার দরিয়া নগর গ্রী ন ভয়েস নামে একটি সংগঠনের সহযোগিতায় পুলিশ পুলিশের সদস্যরা বেশকিছু উদ্ধার করে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রেজিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম বলেন, সাগরের দেবের তোড়ে ভেসে আসা জিলিপিশ কি করা যেতে পারে তা নিয়ে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলার পর, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, দরিয়া নগর গ্রীন বয়েজের সহযোগিতায় বেশ কিছু জেলিফিশ আমরা এক ফিট বালির নিচে পুঁতে রেখেছি।
সাগর গবেষক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আহমদ গিয়াস বলেন, বসন্তকালে জেলিফিশ গুলো মারা যেতে দেখা যায়। গত বছর আমেরিকার কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার জুড়ে মৃত জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরে অতিরিক্ত গরমের কারণে বাল্ব নামের হিট ওয়েবের প্রতিক্রিয়ায় মারা যেতে পারে জেলিফিস গুলো।
পরিবেশবিদ এইচএম নজরুল বলেন, মৃত জেলিফিশ গুলোর কারণে এলাকার পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। তবে মৃত্যুর কারণের জন্য গবেষণা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা জেলা কমিটির সদস্য পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি টিম জেলিফিশ অপসারণে কাজ করে সমুদ্র সৈকত এলাকায়।
সমুদ্র গবেষনা ইনস্টিটিউটর বিজ্ঞানী আবু সাইদ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, প্রাণঘাতি না হলেও সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা এসব জেলি ফিশের সংস্পর্শে গেলে চুলকানিসহ নানা সমস্যা হতে পারে ।
পরিবেশবিদ মাসুদ উর রহমান বলেন, সাগরের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষার জন্য এসব জেলিফিশ খুবই জরুরী। তাই এসব জেলিফিশ গুলোর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে সাগরের পরিবেশ প্রতিবেশ ঠিক রাখতে হবে।