নেছার বাঙালী:
কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও কবরস্থান সবুজায়নে ব্যাপক হারে চারা রোপন করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ। এছাড়াও সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে বেসরকারী এ উন্নয়ন সংস্থ্যাটি। কক্সবাজার জেলার উখিয়া, রামু, মহেশখালী ও সদর উপজেলার পাশাপাশি উখিয়ার ২ ইস্ট, ১২, ১৮ ও ২০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও বনায়ন ও লাইভলিহুড নিয়ে কাজ করছে এ সংস্থাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলীর বিল সড়ক, মরিচ্যা-গোয়ালিয়া সড়ক, গোরাইয়ারদ্বীপ সড়ক, মধ্যম হলদিয়া সড়ক, নতুন রাস্তা সড়ক, পাতাবাড়ী সড়ক, রতœাপালং ইউনিয়নের ছাদরিকাটার পশ্চিম সড়ক, নজির আহমদ সড়ক, ঝাউতলা সড়ক, গয়ালমারা সড়ক, চাকবৈঠা সড়ক, আমতলী সড়ক সহ বিভিন্ন সড়কের দু-পাশে দেশিয় প্রজাতির চারা রোপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও কবরস্থানের চারপাশেও লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চারা। এসব চারা বাশের ঝুড়ি দিয়ে সংরক্ষনও করা হয়েছে। চারা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পাহারাদারও রয়েছে। এসব চারা সুষ্টভাবে বেড়ে উঠলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সবুজায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে এসব সড়কের দৃশ্য।
সরেজমিনে এসব এলাকার নারী-পুরুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমাজের পিছিয়ে পড়া গরীব ও প্রতিবন্দীদের প্রশিক্ষন ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে ক্ষেত-খামার, হাঁস-মুরগি পালন, ছাগল পালন, সেলাই কাজ সহ জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে বেসরকারী এ উন্নয়ন সংস্থ্যা আরডিআরএস বাংলাদেশ। অনেক এলাকায় দেয়া হয়েছে মশারি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে হাইজিন কিট।
আরডিআরএস বাংলাদেশ এর সহকারী প্রকল্প পরিচালক বশির উল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে উখিয়া, রামু, সদর ও মহেশখালী উপজেলা এবং উখিয়ার ৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮৭ হাজার চারা রোপন করা হচ্ছে। এরমধ্যে উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলীর বিল সড়কে ৭ কি:মি:, একটি উপসড়কে ১ কি:মি:, মরিচ্যা-গোয়ালিয়া সড়কে দেড় কি:মি:, গোরাইয়ারদ্বীপ সড়কে ২ কি:মি:, মধ্যম হলদিয়া সড়কে দেড় কি:মি:, মধ্যম হলদিয়া নতুন রাস্তা সড়কে ২ কি:মি:, পাতাবাড়ী সড়কে ৪ কি:মি:, রতœাপালং ইউনিয়নের ছাদরিকাটার পশ্চিম সড়কে দেড় কি:মি:, ছাদরিকাটার নজির আহমদ সড়কে ১ কি:মি:, ঝাউতলা সড়কে ২ কি:মি:, গয়ালমারা সড়কে দেড় কি:মি:, চাকবৈঠা সড়কে সাড়ে ৪ কি:মি:, আমতলী সড়কে ২ কি:মি: সড়কের উভয় পাশে ফলজ ও দেশিয় প্রজাতির চারা রোপন করা হয়েছে। এসব চারা যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য বাশের ঝুড়ি দিয়ে সংরক্ষন করা হয়েছে। চারা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। উখিয়ার ৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইতিমধ্যে ২০ হাজার চারা রোপন করা হয়েছে। একইভাবে রামু, সদর ও মহেশখালী উপজেলায়ও ২২ হাজার চারা রোপন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ১৬টি বিদ্যালয়, ৪টি মাদ্রাসা, ৪টি মসজিদ ও ৫টি কবরস্থানের চার পশেও চারা রোপন করা হয়েছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশ এর লাইভলিহুড প্রধান হাসানুজ্জামান জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া গরীব ও প্রতিবন্দীদের প্রশিক্ষন ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা ক্ষেত-খামার, হাঁস-মুরগি পালন, ছাগল পালন, সেলাই কাজ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবন মান উন্নয়ন করতে পারে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে পৃথক ভাবে ১৮৭৭ জন ও ৬০০ পরিবারে এ সহায়া প্রদান করা হয়েছে। ২০০ পরিবারে এ সহায়তা চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো ৪ হাজারের অধিক পরিবারে এ সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬০০ গরীব শিক্ষার্থীদের স্কুল পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে হাইজিন কিট। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে ৫ হাজার মশারি বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৯ হাজার মশারি বিতরণ করা হবে।
আরডিআরএস বাংলাদেশ এর কক্সবাজার টীম লিডার মো: হাফিজুর রহমান জানান, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থ্যা আরডিআরএস বাংলাদেশ ১৯৭ সাল থেকে ৫১ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় গরীব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে আসছে। তবে ২০১৯ সাল থেকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া, রামু, সদর ও মহেশখালী উপজেলায় এবং উখিয়ার ২ ইস্ট, ১২, ১৮ ও ২০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে। রোহিঙ্গা আগমনের পর পাহাড়ী এলাকায় বসবাস সহ ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন হয়েছে। বৃক্ষ নিধনের কারনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা এবং নির্মল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য বৃক্ষ রোপনের কর্মসুচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সমাজে পিছিয়ে পড়া গরীব মানুষ এবং প্রতিবন্দীদের উন্নয়নের পাশাপাশি সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবস্থানে সবুজায়নের মধ্যদিয়ে নির্মল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্যই বৃক্ষ রোপনের এ কর্মসুচী। এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গরীব শিক্ষার্থীদের স্কুল পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। যাতে পোশাক সহ শিক্ষা উপকরনের জন্য কোন শিক্ষার্থী ঝড়ে না পড়ে। সুবিধা বঞ্চিত গ্রামের গরীব মানুষ গুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। যাতে এসব গরীব মানুষ ক্ষেত-খামার, হাঁস-মুরগি পালন, ছাগল পালন, সেলাই কাজ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে।
##