শিরোনাম :
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরে আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা উখিয়ায় সংরক্ষিত বন থেকে বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন উখিয়ায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে এডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত “আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে -মুহাম্মদ শাহজাহান পেকুয়ায় বিয়ের দাবীতে প্রবাসীর বাড়িতে তরুণীর বিষপান পেকুয়ায় ব্যবসায়ীকে হামলা ও দোকান লুটপাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন কক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কক্সবাজারে নারীর প্রতি সংহিসতা নিরোধে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল বেতুয়ায় ১৪ বসতবাড়ী জ্বলে-পুড়ে ছাঁইঃক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২কোটি টাকা

নিউজ রুম / ৬৪ বার পড়ছে
আপলোড : শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

রহমান তারেক :

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি,সেনা ও সরকারি দপ্তরের  ৩৩০ জন স্বদেশের পথে যাত্রা দিয়েছেন। ১৬৫ জন করে দু ভাগে নিজ দেশের পথে বাংলাদেশ ছাড়েন তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের ইনানীতে আসা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপির কর্ণেল মিও থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি এই ৩৩০ জনকে গ্রহণ করে মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ যোগে যাত্রা দেয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১১টায় তাদেরকে বিজিপির কাছে হস্তান্তর করেন।

১২দিন পর বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই ঠিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন মিয়ানমার সরকারি বাহিনী ও বেসমরিক নাগরিকদের ফেরত নিতে ১১ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক শেষে তাদের ফেরাতে  উদ্যোগ নেওয়া হয়।

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বর্ড়ার গার্ড বাংলাদেশের(বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী  ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে উপস্থিত ছিলেন।

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন,বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।

#যেভাবে হয়েছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া :

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সেনা সহ ৩৩০ জনকে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে বিজিবির অধিনে।

বিজিবির সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (জিএস ব্রাঞ্চ) ব্রিগেডিয়ার মোঃ জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপি সহ  ৩৩০ জন। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের তরফে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়।

বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন এর প্রেক্ষিতে বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বৃহস্পতিবার হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে।

এর জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ও টেকনাফ থেকে বিজিবির কড়া পাহারায় কক্সবাজারের ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাটে এই ৩৩০ জনকে আনা হয়। যেখানে সকাল ৮ টা থেকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সকাল সাড়ে ৯ টার কিছুক্ষণ পরে কোস্টগার্ডের জাহাজ থেকে ইনানী জেটিতে আসেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপির কর্ণেল মিও থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি। যেখানে পৌঁছার পর উভয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে লিখিত কাগজে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা ১১ টার দিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ের সামনেই ৩৩০ সদস্যকে বিজিপির কর্ণেল মিও থুরা নউংয়ের হাতে হস্তান্তর করেন। এরপর একে একে ১৬৫ জনকে জেটি দিয়ে তোলা হয় সেন্টমার্টিন নৌ রুটে চলাচলকারি পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলিতে। দুপুর ১২ টার দিকে জাহাজটি ১৬৫ জনকে নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমান্ত্রে অপেক্ষারত মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজে পৌঁছে দেয়। পরে ফিরে ৪ টার দিকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১৬৫ জনকে নিয়ে পৌঁছানো হয় মিয়ানমারের জাহাজে। তাদের নিয়ে মিয়ানমারের জাহাজটি যাত্রা দেয় মিয়ানমারের রাজধানীর দিকে।

এসময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে এসে পড়ে। এতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ৩৩০ জনকে বিজিবির পক্ষে সর্বোচ্চ সহায়তা ও সহযোগিদা প্রদান করা হয়েছে। আহতদের দেয়া হয়েছে চিকিৎসা। উভয় দেশের আন্তরিকতায় এবং নানা মহলের সহ সহযোগিতায় এদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হল। এর জন্য তিনি সাংবাদিক সহ সকলকে ধন্যতা জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সীমান্তে সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছে। রোহিঙ্গা সহ কোন প্রকার অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর