সাগর ও স্থল পথে টহল জোরদার : নিখোঁজ জেলের ১৭ দিন পর মৃতদেহ উদ্ধার

নিউজ রুম / ২৫ বার পড়ছে
আপলোড : রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ন

সাকলাইন আলিফ :

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গোলাগুলির ঘটনা কমেছে। রবিবার সকালে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর রাতে এবং গতকাল সোমবার সকালে কিছু গোলাগুলির শব্দ শুনা গেছে। এরপর থেকে ওপারে গুলির শব্দ তেমন শোনা যায়নি। সাগর ও স্থল পথে টহল জোরদার রেঘেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

যাতে নতুন করে কোন রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তারা সর্তক অবস্থায় রয়েছে।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানিয়েছে  গতকাল সকালে কয়েকটা গুলির শব্দ শুনা গেছে। তবে গত তিনদিন আগের মতো গুলির শব্দগুলো এতো বিকট ছিলনা। নাফনদে দীর্ঘদিন ধরে মাছধরা বন্ধ। গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তে যে গোলাগুলি হচ্ছে নাফনদে বড়শি নিয়ে মাছ ধরাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এ জনপ্রতিনিধি।

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনেও গতকাল রবিবার মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দ তেমন শোনা যায়নি। পুরোদিনে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা দশ থেকে পনেরোটি গুলির শব্দ শুনেছেন, যেগুলো এতো বিকট শব্দ নয়। সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি কিছুটা কমায় দ্বীপের বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

মিয়ানমার অভ্যন্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার আজ্ঞুমানপাড়া সীমান্তের খালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক জেলের ১৭ দিন পর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে; স্বজনদের দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা ওই জেলেকে অপহরণ করেছিল।

উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন জানান, রোববার রাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতেরবিল সীমান্তের নাফ নদীর তীরের বেঁড়িবাধ থেকে নিখোঁজ জেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত মোস্তাফিজুর রহমান (৪৭) উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আজ্ঞুমানপাড়ার মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে। তিনি পেশায় জেলে ও দিনমজুর।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে উখিয়া উপজেলার আজ্ঞুমানপাড়া সীমান্তে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যান স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন জেলে। এক পর্যায়ে সশস্ত্র আরাকান আর্মির সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ওইদিন ঘটনাস্থলের আশপাশের থাকা অন্য জেলেরা বিষয়টি স্বজনদের জানায়।

স্বজনরা বিষয়টি বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অবহিত করার পাশাপাশি নানাভাবে খোঁজ খবর নিয়েও তার সন্ধান পাননি।

নিহতের ছোট ভাই মো. আমির হোসেন বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে উখিয়া উপজেলার আজ্ঞুমানপাড়া সীমান্তে নাফ নদীতে অন্য জেলেদের সাথে তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমানও মাছ ধরতে যান। এক পর্যায়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হলেও তার ভাইয়ের সন্ধান পাননি। অপহরণকারিরা স্বজনদের সঙ্গে কোন ধরণের যোগাযোগও করেনি।

তিনি বলেন, “ রোববার সন্ধ্যার আগে আগে উখিয়া উপজেলার রহমতেরবিল সীমান্তে চিংড়ি ঘেরে কাজ করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম। এক পর্যায়ে তিনি নাফ নদীর বেঁড়িবাধের উপর মোস্তাফিজুর রহমানকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি স্বজনদের অবহিত করেন। “

আমির হোসেন বলেন, খবরটি শোনার পর বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে স্বজনরা অবহিত করেন। পরে রোববার রাত সাড়ে ১১ টায় বিজিবির সহায়তায় রহমতেরবিল সীমান্তের বেঁড়িবাধ থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

“ এসময় নিহত মোস্তাফিজুর রহমানের শরীরে কোন ধরণের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার চিহ্ন রয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, অপহরণকারিরা তাকে বেঁধে রাখায় অনাহারে মৃত্যুর পর লাশ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ফেলে রেখে যায়। “

শামীম হোসেন বলেন, সোমবার সকালে খবরটি শোনার পর পুলিশ নিহতের বাড়ী থেকে মোস্তাফিজুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। তার শরীরের আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। তবে তার পায়ে রশি বা শিকল জাতীয় কোন কিছু দিয়ে বেঁধে রাখার চিহ্ন রয়েছে।

তবে কারা, কি কারণে এ জেলেকে অপহরণ করে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ তা নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি।

ওসি জানান, নিহতের লাশ ময়তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, উখিয়ার রহমতের বিল ও টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং সীমান্তের ওপারে গত সপ্তাহ ধরে মর্টার শেল ও গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে। এসব সীমান্তের লোকজন এখন অনেকটা স্বস্তিতে দিন পার করছেন।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর