মিনি বান্দরবান’—পাহাড়ি সৌন্দর্যের মোহনীয় ঠিকানা

নিউজ রুম / ৩৩ বার পড়ছে
আপলোড : রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :

কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে দক্ষিণে টেকনাফের দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলে সামনে পড়ে উখিয়ার রেজুখাল সেতু। সেতুর পাশে বিজিবির তল্লাশিচৌকি। ঠিক তার পাশেই টাঙানো একটি সাইনবোর্ডে চোখে পড়ে লেখা—‘মিনি বান্দরবান’। সাইনবোর্ডটির পথ ধরে গেলে উন্মোচিত হয় এক অপূর্ব পাহাড়ি সৌন্দর্যের ভুবন, যা এখন কক্সবাজারের পর্যটকদের কাছে নতুন নাম—‘মিনি বান্দরবান’।

উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুক চিরে আঁকাবাঁকা ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নাম ‘গোয়ালিয়া-মরিচ্যা সড়ক’। রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের এই সড়কটি দিয়ে যেতে দু’পাশে সবুজ গাছপালা, পাখির কিচিরমিচির আর পাহাড়ি বাতাস যে কাউকেই মুগ্ধ করে। সমুদ্রকেন্দ্রিক শহর কক্সবাজারে পাহাড়ি রোমাঞ্চ খুঁজতে আসা পর্যটকদের জন্য এটি যেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

সড়কটির দু’পাশে কোথাও সুপারিবাগান, কোথাও ধান ও সবজির খেত—আর মাঝে মাঝে দেখা যায় স্থানীয়দের ছোট ছোট টিনঘর। তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই চোখে পড়ে পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ‘গোয়ালিয়া পার্ক’। এখানে গিয়ে কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ বা নিঃশব্দে উপভোগ করছেন চারপাশের সবুজের আবেশ। পাশে কাঠের চৌকিতে বসে অনেকে চা-কফি পান করছেন, গল্পে মেতে উঠছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সাজিদুর রহমান বলেন, “মেরিন ড্রাইভে যেতে হঠাৎ চোখে পড়ে ‘মিনি বান্দরবান’ লেখা বোর্ড। এরপর কৌতূহল থেকেই এলাম। যারা কখনো খাগড়াছড়ি, বান্দরবান বা রাঙামাটির পাহাড় দেখেননি, তাঁদের জন্য এটি সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা।”

তাঁর সহযাত্রী বিলকিস আক্তার জানান, “বান্দরবানের নীলাচলের মতো বিশাল নয়, তবে এই জায়গাটির সৌন্দর্যও কম নয়। পাহাড়ের সবুজ আর শান্ত পরিবেশ এক অনন্য অনুভূতি দেয়।”

গোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে আরও একটি পাহাড়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়টিতে উঠলে দেখা যায় বিস্তীর্ণ ঝাউবাগান, রেজুখালের ঢেউ, আর দূরে নীল সমুদ্ররেখা। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্যও চোখ জুড়ায়।

দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক মকবুল আহমদ বলেন, “বান্দরবানের মতো উঁচু পাহাড় বা ঝরনা না থাকলেও মিনি বান্দরবান ঘুরতে এসে মন ভরে গেছে। কক্সবাজারে সমুদ্রের পাশাপাশি পাহাড়ের রূপ একসঙ্গে উপভোগ করা যায় এখানেই।”

তবে পর্যটকদের দাবি, এখানে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি। ফেনীর পর্যটক সোহেল রানা বলেন, “মিনি বান্দরবানে সন্ধ্যার পর নিরাপত্তা নেই। শৌচাগার, বিশ্রামাগার বা মানসম্পন্ন খাবারের দোকানও নেই। এসব থাকলে পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে।”

খুনিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, প্রায় আট বছর আগে স্থানীয় মানুষের যাতায়াত সহজ করতে এই সড়কটি আমি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় নির্মাণ করার ব্যবস্থা করি। মেরিন ড্রাইভের রেজুখাল থেকে মরিচ্যা বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এই সড়ক এখন পর্যটকদের কাছে এক নতুন গন্তব্য।

বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল হক বলেন, “এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ২ হাজার পর্যটক আসছেন। কিন্তু পর্যটন অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। সরকারি উদ্যোগে শৌচাগার, রেস্তোরাঁ, বিশ্রামাগার ও নিরাপত্তা জোরদার করা গেলে এটি কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে।”

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, “সমুদ্রের পাশাপাশি পাহাড়ের স্বাদ নিতে অনেক পর্যটক এখন মিনি বান্দরবানে যাচ্ছেন। সরকারি উদ্যোগে এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা গেলে পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”

এখনও এটি মূলধারার পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠেনি। তাই যারা শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির আসল রূপ দেখতে চান, তাঁদের জন্য ‘মিনি বান্দরবান’ হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য। তবে স্থানীয়দের পরামর্শ—সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘুরে চলে আসুন, কারণ রাত নামলে পাহাড়ি এই এলাকা ডুবে যায় নীরব অন্ধকারে।

কক্সবাজারের সমুদ্রতীরের পাশেই এমন পাহাড়ি সৌন্দর্য একসঙ্গে দেখতে পাওয়া বিরল। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য তাই এই ‘মিনি বান্দরবান’ যেন কক্সবাজারের বুকে বান্দরবানেরই ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর