রামুতে কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব

নিউজ রুম / ৩০ বার পড়ছে
আপলোড : বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:১২ অপরাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন যে কোন ধর্ম ও উপাসনালয় অবমাননাকারিকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোন অপশক্তি যেন ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম যারা অবমাননা করে তারা দুর্বৃত্ত।
কক্সবাজারের রামুতে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানোর উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।
বৌদ্ধদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর তীরে উদযাপিত হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব। আর উৎসবকে ঘিরে নদীর দুই তীরে বৌদ্ধদের পাশাপাশি অন্য সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষের ভিড় যেন পরিণত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায়। এদিকে ইসরাইলের বর্বর গণহত্যা সহ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানিয়ে উৎসবের কল্পজাহাজে সাটানো ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। আয়োজকরা বলছেন, এই উৎসবের মাধ্যমে ধর্মীয় ঐতিহ্যকে লালনের পাশাপাশি বুদ্ধের অহিংস নীতির আলোকে মৈত্রীময় শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে তাদের প্রতিবাদী আয়োজন।
বিকেল গড়াতেই বৌদ্ধদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রামুর চেরাংঘাটা সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর দুই তীর। আর নদীর বুকে ভাসছে বাঁশ, কাঠ, বেত আর রঙিন কাগজ দিয়ে নান্দনিক কারুকার্যে তৈরি কয়েকটি কল্পজাহাজ; এসব জাহাজের শিল্পসৌন্দর্যের সাথে বুদ্ধসংকীর্তন পরিবেশনা উপভোগ করে মাতোয়ারা দর্শনার্থীরা। জাহাজগুলো ঘিরে কেউ বাজাচ্ছে ঢোল, কেউ কাঁসা, আবার কেউ মেতে উঠেছেন নাচ-গানে—এই উৎসব যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভাসমান এক মিলনমেলা।
কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি
মিথুন বড়ুয়া বোথাম বলেন,রামুর ঐতিহ্যবাহী এবারের উৎসবে হাইটুপী, মেরংলোয়া, পূর্ব মেরংলোয়া, শ্রীকুল, দ্বীপ শ্রীকুল, পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল গ্রামের ৭ টি কল্পজাহাজ ভাসানো হয়। তিনি বলেন এ জাহাজ ভাসা উৎসব এতদঅঞ্চলের কয়েকশো বছরের ঐতিহ্য; সম্প্রীতির মিলন মেলা। আর শান্তি ও সম্প্রতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের আহবানে কল্পজাহাজে ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা সাটানো হয়েছে।

কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা
রজত বড়ুয়া রিকু বলেন,বৌদ্ধ শাস্ত্রমতে, আজ থেকে আড়াই হাজারের বেশী বছর আগে বৈশালী রাজ্যে অনাবৃষ্টি, খরা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। তা থেকে মুক্তি পেতে প্রবারণা দিবসেই রাজগৃহ থেকে বৈশালী রাজ্যে আমন্ত্রিত হন। আর মহামতি বুদ্ধের আগমনের খবর পেয়ে পূজা করতে এসেছিলেন দেব, ব্রহ্মা ও নাগরাজেরা। এসময় ৫ শতাধিক নাগরাজ সুদৃশ্যময় নান্দনিক ফনা মেলে বুদ্ধকে নদী পার করিয়েছিলেন। সেই পূণ্যময় স্মৃতিকে অম্লান রাখতে যুগ যুগ ধরে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় কল্পজাহাজ ভাসিয়ে প্রবারণা উদযাপন করে আসছে।
উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বোথামের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রিয় মৎস্যজীবি বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা ডক্টর সুকোমল বড়ুয়া, জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের সভাপতি লায়ন উদয় কুসুম বড়ুয়া, কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ আঃ মান্নান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ সাইফ উদ্দীন শাহিন প্রমুখ।
শতবর্ষের ঐতিহ্যে রামুর বাঁকখালীতে কল্প জাহাজের আলোয় ভাসে সম্প্রীতির বার্তা, প্রবারণার আনন্দ। আর সেই বার্তাকে ছড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী কল্পজাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর