মহান মে দিবস : চরম কষ্টে লবণ শ্রমিকরা : প্রচন্ড গরমে লবণের সাথে মিশে যাচ্ছে কষ্টের ঘাম

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:০৪ PM, ০১ মে ২০২৪

সাকলাইন আলিফ :

প্রচন্ড গরমে কক্সবাজারের লবণ শ্রমিকরা নিদারুণ কষ্টে তাদের দিন যাপন করছে। মহান মে দিবসের আজকের দিনেও গরমের মাঝে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন লবণ শ্রমিকরা। লবনের ন্যায্য মূল্য না থাকলে তাদের শ্রমের মজুরিও কমে যায়। নেই কোনো বিশ্রামের ব্যবস্থা। সেই সাথে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। নেই কাজের সুন্দর পরিবেশ। যদিও বা এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য সামাজিক ন্যায় বিচার এবং সুন্দর কাজের পরিবেশ।
আজ মহান মে দিবস যেটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের শিক্ষিতের দিন। শ্রমিকদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর সারা বিশ্বে পালন করা হয়। দিবসটি প্রতিবছর পালিত হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যে কোন পরিবর্তন ঘটে না বলে জানালেন কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকার লবণ চাষী আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, আগেও লবণ মাঠের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি এখনও করে যাচ্ছি। আগে এত গরম ছিল না এখন বেশি গরম।
মহেশখালীর কালারমার ছড়া এলাকার লবণ শ্রমিক ইকবাল বলেন, সারাদিন লবণ মাঠে কাজ করি, এখন এত গরম পড়ছে যা বলার মতো না। আগে এরকম গরম দেখিনি। গরমে শরীর থেকে যে ঘামগুলো ঝরছে সেগুলো লবণ মাঠে পড়ে একাকার হয়ে যায়। কি করবো পেটের দায়ে এ লবণ শ্রমিকের কাজ করছি।
কুতুবদিয়ার লেমশিখালী এলাকার লবণ চাষী ফরিদুল আলম বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে লবণ উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুন। যত গরম বেশি পড়ে তত লবণ বেশি উৎপাদন হয়। তাই গরমের মাঝেই আমাদের মাঠে থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে ভমি হয়, মাথা ঘুরঘুর করে। এ রোদের মাঝে বিশ্রামের কোন ব্যবস্থা নেই। নেই স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার মতো কোন ব্যবস্থা। কাজের কোন সুন্দর পরিবেশ ও নেই।
বাংলাদেশ লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, গরম বেশি পড়ার সাথে সাথে লবণ উৎপাদন বেড়ে গেছে। গতকাল একদিনেই কক্সবাজারে প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু আমাদের শ্রমিকদের কোন স্বাস্থ্যসেবা নেই, সুন্দর পরিবেশ নেই কাজের।
চাষিরা ন্যায্য মূল্য না পেলে শ্রমিকরাও ন্যায্য টাকা পায় না।
বাংলাদেশ লবণ চাষী সমতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে এ ব্যাপারে সরকারের অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ লবণ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ফরিদুল আলম বলেন, এই গরমের মাঝে আমাদের শ্রমিকরা অনেক কষ্ট করে কাজ করছে। কিন্তু কাজের মধ্যে তাদের কোন সুন্দর পরিবেশ নেই। প্রচন্ড গরমের মধ্যে খালি পায়ে কাজ করতে হচ্ছে। লবণ মাঠ প্রচন্ড গরমে বিশ্রামের কোন ব্যবস্থা নেই। গরমে অসুস্থ হয়ে গেলে হঠাৎ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যায় না।
আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তা কামনা করছি।
লবণ শিল্প উন্নয়ন কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাফর ইকবাল ভূইয়া বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ৬৬ হাজার ৪৪২ একর জমিতে এ বছর লবণ চাষ হচ্ছে।
এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। তার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন।
এসব লবণ উৎপাদনে কাজ করছে ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন চাষী।

আপনার মতামত লিখুন :