বিডি প্রতিবেদক:
সদ্য জেল ফেরত মোস্তাক আহমদ ওরফে ইয়াবা মোস্তাক আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সে ইয়াবা পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে চট্রগ্রাম কারাগারে প্রায় ৪ মাস কারাভোগ শেষে জামিনে বের হন জুন মাসের ১১ তারিখ। এলাকায় এসে সামাজিক কাজে জড়িত থাকার আড়ালে তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে ফের শুরু করে ইয়াবা পাচার। ইয়াবার টাকার বদৌলতে পুনরায় ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলার সাহস করেনা। মোস্তাক আহমদ ওরফে ইয়াবা মোস্তাকের নামে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় ইয়াবার ডজন মামলা রয়েছে। কক্সবাজারের শীর্ষ ইয়াবা কারবারির তালিকায় রয়েছে তার নাম। আদালতের নির্দেশে ২০২০ সালে রামু থানা পুলিশ তার বাড়ির মালামাল ক্রোক করেছিল। কিন্তু ধুরন্দুর এ ইয়াবা কারবারি তার বাড়ির ক্রোক করা মালামালও পুনরায় আদালতের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।
এক সময়ের মুরগি বিক্রেতা মোস্তাক আহমদ ইয়াবা পাচার করে বাড়ি, গাড়ি, জমিজমা, ব্যাংক ব্যালেন্সসহ গড়ে তুলেছে এক বিশাল সা¤্রাজ্য। নিজ বাড়ী থেকে ১০ হাজার ইয়াবা সহ গ্রেফতারও হয়েছিল জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। এরপর ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোপালবাগ থেকে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ র্যাব ২ জনকে আটক করলেও মোস্তাকসহ ৩ জন পালিয়ে যায়। যাত্রাবাড়ী থানায় র্যাবের দায়ের করা মামলা নং- ৬৫, তাং-১৬.১০.২০১৮। একইভাবে ৮ ও ১৩ অক্টোবর দুই দফায় ঢাকায় র্যাব ও পুলিশের হাতে মোস্তাকের সহযোগীরা ইয়াবাসহ আটক হলেও পালিয়ে যায় গডফাদার মোস্তাক। এসব ঘটনায়ও মামলা হয় মোস্তাকের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকা থেকে ২৫ হাজার ৬শত ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করলেও মোস্তাকসহ ৪ জন পালিয়ে যায়। এছাড়াও কলাবাগান থানার জি আর মামলা নং- ১১৪৫/১৮ইং সহ ডজন মামলা রয়েছে।
তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক। তার বিস্তৃত নেটওয়ার্কে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকবার তার বিস্তৃত নেটওয়ার্কে হানা দিলেও বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ইয়াবা মোস্তাক। ২০২১ সালের ১০ মার্চ র্যাবের এমনই এক অভিযানে ফসকে যায় ইয়াবা মোস্তাক। এসময় তার সিন্ডিকেটের জয়নাল, রহিম উল্লাহ, জাফর ইয়াবাসহ আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে তার ছোট ভাই মোক্তার আহমদকে উখিয়ার থাইংখালী থেকে বিপুল মাদক সহ আটক করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। তবে এক মাসের মধ্যে সেও জামিনে বের হয়ে মাদক পাচার অব্যাহত রাখে। বর্তমানে একই এলাকার বেলাল, মইন্যা, এরশাদ উল্লাাহ, আজমুল্লাহ, ছৈয়দ আলমসহ অনেকে সক্রিয় রয়েছে মোস্তাকের ইয়াবা পাচারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি মোস্তাক আহমদের বাড়ি রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড পূর্ব গোয়ালিয়াপালং এলাকায়। তার বাবা আশরাফ মিয়া ছিল পেশায় কাঠুরিয়া। কিন্তু ইয়াবার কল্যাণে কাঠুরিয়া বাবার সংসারকে কোটিপতির কাতারে নিয়ে গেছে মোস্তাক। অল্প পড়াশোনা জানা মোস্তাক আনসার বাহিনীতে যোগ দেন প্রথম জীবনে। অল্প বেতনের কারণে আনসারের চাকরি ছেড়ে দেয় সে। তার বড় ভাই মনসুরের হাত ধরে মিয়ানমারের চোরাই পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। মরিচ্যা বাজার একসময় ছিল চোরাই পণ্য পাচারের ঘাঁটি। চোরাই পথে কাপড়, আচার, বিয়ার, মদসহ নানা পণ্য নিয়ে আসত। সেখানেও তার ভাগ্য খোলেনি। পরে শুরু করে মুরগির ব্যবসা। এই মুরগি ব্যবসার আড়ালে দেশের বিভিন্ন স্থানে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা পাচারে। এক সময়ের মুরগি বিক্রেতা মোস্তাক বনেযান কোটি কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছে বিত্তবৈভব, গাড়ি, বাড়ি, সহ আরও অঢেল সম্পদ। কোটি টাকা খরচ করে হয়েছে জনপ্রতিনিধিও। তার বড় ভাই মনসুর ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি মানব পাচারেও জড়িত। তবে ধুন্দুর মনসুর এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।
২০২১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তায় রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শীর্ষে থাকা ইয়াবা কারবারি মোস্তাকের একটি ইয়াবার চালান পাচার হচ্ছে এমন গোপন সংবাদে অভিযানে নামে র্যাব-১৫ একটি দল। এ সময় বরাবরের মতো অভিযানের খবরে মোস্তাক পালিয়ে গেলেও ২০ হাজার ইয়াবা সহ তার সিন্ডিকেটের ৩ সদস্য গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওই সময় র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মিডিয়া আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী জানান, উদ্ধার হওয়া ২০ হাজার ইয়াবার প্রকৃত মালিক মোস্তাক আহমদ ওরফে ইয়াবা মোস্তাক। গ্রেফতারকৃত তিন সহযোগীকে নিয়ে ইয়াবা বিক্রি করতে ওইদিন স্থানীয় মরিচ্যা বাজার এলাকায় অবস্থান করেন তিনি। কিন্তু র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান মোস্তাক। প্রকৃতপক্ষে মোস্তাক বড়মাপের ইয়াবা কারবারি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মোস্তাক আহমদ একজন বড়মাপের ইয়াবা কারবারি। জনপ্রতিনিধির আড়ালে সে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার বড় চালান পাচার করে আসছে। কিন্তু, হাতেনাতে প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে যেসব ইয়াবার মামলা রয়েছে, সবক’টিতে জামিনে রয়েছে। এমনকি আদালতের নির্দেশে তার বাড়ির ক্রোক করা মালামালও পুনরায় আদালতের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এরপরও পুলিশ তাকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে। অবশ্য কোনও না কোনও একদিন সে ধরা পড়বে। কারণ, সে একজন মুখোশধারী ইয়াবা কারবারি।
বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী ইয়াবা মোস্তাকের পেছনে কিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে জিরু টলারেন্স ঘোষনা করে বআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে সপরিবারে পালিয়ে যায় ঢাকায়। এ সময় ক্রসফায়ারের ভয়ে ঢাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের রেখে ইয়াবা পাচারের একটি মামলায় আদালতে জামিন নিতে গিয়ে কারাগারে ঢুকে পড়ে। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকটা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কারাগার থেকে বের হয়ে এলাকায় ফিরে আসে। পুনরায় বীরদর্পে চা