বিডি প্রতিবেদক :
সীমান্তে কাটছে না উৎকণ্ঠা। তবে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের স্থানীয় লোকজনসহ শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতংক।
রোববার দুপুরে দেখা যায়, ঘুমধুম কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার কাটাতাঁরের বেড়া ঘেঁষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দলে দলে টহল দিচ্ছে সৈন্যরা। হাতে রয়েছে অস্ত্র, কাঁধে রয়েছে ব্যাগ। সৈন্যদের টহল দেয়ার সারি যেন ১০মিনিটেও শেষ হয় না।
এদিকে সীমান্তের ৩৩-২ নাম্বার পিলার, এই পিলারের বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তৈরি করেছে বাংকার। যেখানে দেখা যাচ্ছে ভারী অস্ত্র, অবস্থান করছে সৈন্যরা।সীমান্তের এমন পরিস্থিতি শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা রয়েছেন আংতকে।শূণ্যরেখার বাসিন্দা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রহিম বলেন, শূণ্যরেখায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। আমরা কেউ শান্তিতে নেই। এখন আতংকে দিন কাটছে।
শূণ্যরেখার আরেক বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের সরকারের সৈন্যরা গোলাগুলি বেশি করছে। এতে আমরা বেশ ভয়ে আছি। সীমান্তে সৈন্যও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিন-রাত সৈন্যরা টহল দিচ্ছে। রোববারও শতাধিক সৈন্য কাটাতাঁরের বেড়া দিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্ত্র হাতে নিয়ে টহল দিয়েছে। তাদের কাছে কোন রাত দিন নেই, যখন যেখানে খুশি তারা তাদের ইচ্ছে মতো গুলি করছে।
সীমান্তের স্থানীয় লোকজন জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্তে গোলাগুলি, গোলা বর্ষণ ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে মিয়ানমার সৈন্যরা। যার কারণে এখনো উৎকণ্ঠা কাটছে না সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না ঘর থেকে, অনেকেই গোয়ালে রশি দিয়ে গবাদি-পশুও বেঁধে রেখেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, গোলাগুলি আংতকে এখন বাচ্চাদেরও স্কুল যেতে দিচ্ছে না। গরু-ছাগলও রশি দিয়ে ঘরের আঙ্গিনায় বেঁধে রেখেছি। আর আমাদেরও ঘর থেকে বের হতে ভয় লাগে।
তুমব্রু উত্তরপাড়ার বিলকিস খাতুন বলেন, শনিবার বেশি গোলাগুলি হয়েছে। ৩ বার হেলিকপ্টার নিয়ে এসে গোলা বর্ষণ করেছে। যার কারণে আমরা বাড়ি থেকে বের হতেও পারছি না ভয়ে। ক্ষেত-খামারেও যেতে পারছি না।
গেল ২৮ আগস্ট একটি মটার শেল এসে পড়ে তুমব্রু উত্তরপাড়ার নুর আহমদের বাড়ির আঙ্গিনায়। পরে নিষ্ক্রিয় করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নুর আহমদের স্ত্রী নুর জাহান বলেন, গোলাগুলি হলেও আগে তেমন ভয় পেতাম না। কিন্তু যেদিন বাড়ির সামনে মটার শেল পড়েছে সে দিনের পর থেকে বেশি ভয়ে আছি। মিয়ানমারের সৈন্যরা হেলিকপ্টার নিয়ে গুলি করছে। আমরা খুবই ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানালেন, সীমান্তের বাসিন্দাদের নিষেধ না থাকলেও ভয়ে কারণে ক্ষেত-খামারে যাচ্ছে না।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩নং ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, “সীমান্তে মটার শেল, উড়োজাহাজ, জেড বিমান বা হেলিকপ্টার এসে গোলাবারুদ নিক্ষেপ করছে। ভয় তো স্বাভাবিক থাকবে। মানুষ মরণশীল, কিন্তু মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায়। যার কারণে অনেকে হয় তো নিজের ইচ্ছেই ক্ষেত-খামারে যাচ্ছে না। কেউ নিষেধ করেনি। কিন্তু সচেতন হয়ে হয় তো যাচ্ছে না। পরিস্থিতি তো এরকম থাকবে না। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে আবারও সবাই যে যার যার মতো ক্ষেত-খামারে গিয়ে কাজ করবে।