বিডি প্রতিবেদক :
কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার, রেলের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মহাকাশ গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ভারতের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুই দেশের কর্মকর্তারা এসব সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
ভারত সফররত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউজে পৌঁছালে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে স্বাগত জানান। প্রথমে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন এবং পরে তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় আলোচ্যসূচিতে।
চুক্তি স্বাক্ষর শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় দুই দেশ অনেকগুলো অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান করেছে।
ভারতকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিকটতম প্রতিবেশী’ হিসেবে বর্ণনা করে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ দুই দেশের সকল অমীমাংসিত বিষয়ের দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের সঙ্গে ৭ সমঝোতা স্মারক-
ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়েছে ৫৪টি নদী এবং এগুলো শত শত বছর ধরে দুদেশের মানুষের জীবিকার সাথে সংযুক্ত থেকেছে।
“এসব নদী, এগুলোকে জড়িয়ে থাকা লোকগাঁথা ও লোক সংগীত আমাদের একীভূত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। আজকে আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটা ভারতের দক্ষিণ আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে উপকৃত করবে।”
যেসব বিষয়ে সমঝোতা-
· সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশের ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)।
· বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
· বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভোপালে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক।
· ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেল কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
· বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
· ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতীর’ সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সমঝোতা স্মারক।
· মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে বিটিসিএল এবং এনএসআইএল এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে ভারতের সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সর্বদা বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পৌঁছেছে অনন্য মাত্রায়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন ধরনের আইসিটি অবকাঠামো তৈরিতে নলেজ পার্টনার ও আর্থিক ঋণ দিয়ে বাংলাদেশ ও আইসিটি বিভাগকে সহযোগিতা করেছে ভারত সরকার।
আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে স্টার্টআপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। সেখানে বাংলাদেশের ৫০ টি স্টার্টআপ ও ভারতের ৫০ টি স্টার্টআপ সহ মোট ১০০টি স্টার্টআপের মধ্যে ম্যাচ মেকিং, আভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিনিময়ের জন্য অংশগ্রহন করবে।
আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় তরুণদের আকৃষ্ট করতে এবং বিনোদনের সাথে শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ তৈরিতে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে Establishment of Bangladesh Bharot Digital Edutrainment Center (BDEC) প্রকল্প নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির অধীনে ৬৪ জেলায় কমপ্লেক্স স্থাপনে ভারতের গ্ৰ্যান্ট ৫০ কোটি এবং বাংলাদেশের বাকী ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচেছ।
এছাড়াও প্রযুক্তি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আইসিটি সেক্টরের প্রসারে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে দুই দেশের উচ্চতর পর্যায়ে আলোচনা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে বেশ কয়েকটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো-
১। দক্ষতা উন্নয়ন, যৌথ ডিগ্রি এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় মাদ্রাজ আইআইটি বাংলাদেশে ক্যাম্পাস স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক;
২। দক্ষতা উন্নয়ন, যৌথ ডিগ্রি এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় দিল্লী আইআইটি বাংলাদেশে ক্যাম্পাস স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক;
৩। উভয় দেশের যৌথ উদ্যোগে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও টেকসই ইকোসিস্টেম তৈরিতে স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার সঙ্গে স্টার্টআপ বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক;
৪। পিকেআই ব্যবহার করে ডিজিটাল স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে সিসিএ বাংলাদেশ ও সিসিএ ইন্ডিয়া মধ্যে সমঝোতা স্মারক;
৫। বাংলাদেশের আইসিটি অধিদপ্তরের ই-গভর্নেন্সে ও ভারতের ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স বিভাগের যৌথ অংশীদারিত্বের বিষয়ক খসড়া প্রণয়ন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক;
৬। বিইডিইসি সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিটি সরঞ্জাম সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইআরডি ও হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর;
৭। বাংলাদেশের ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রাঞ্জেকশন ‘বিনিময়’ উন্নয়নে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিতের বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক;
উল্লেখিত বিষয়সমূহ নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে এবং প্রযুক্তি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সাইবার সুরক্ষা ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশ-ভারত একসাথে কাজ করলে উভয় দেশ সার্বিকভাবে উপকৃত হবে।