মো: আকিব হোসেন খান কিশোরগঞ্জ :
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বুকচিরে বয়ে চলা নরসুন্দা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নরসুন্দা লেক। তখনো পাখিদেরও ঘুম ভাঙেনি। তাতে কি! প্রকৃতির কাছাকাছি এসে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ তো হয়। পুবাকাশে তখন লাল আভা। সূর্য উঠি উঠি করছে। ভোরের পাখিরা স্বাগত জানায় প্রাতঃভ্রমণকারীদের।
নরসুন্ধা লেকের সূর্যোদয় একটু অন্যরকম। ভোর থেকেই নানা বয়সী ভ্রমণকারীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে নরসুন্দা লেক। দিনের আলো ফোটার আগেই অনেকে বেরিয়ে পড়েন ঘর থেকে। অনেকে ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকেই সরাসরি চলে আসেন।
পৌর নাগরিকদের জীবনমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নরসুন্দা প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পাঁচটি দৃষ্টিনন্দন সেতু ও দু’টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নরসুন্দা লেকের পাশেই গুরুদয়াল সরকারি কলেজ। কিশোরগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নরসুন্দর লেকটি শহরবাসির বিনোদনের অন্যতম এক স্থান। কিশোরগঞ্জে থাকেন অথচ নরসুন্ধা লেকে ঘুরতে যাননি; এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তখনো পাখিদেরও ঘুম ভাঙেনি। তাতে কি! প্রকৃতির কাছাকাছি এসে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ তো হয়। পুবাকাশে তখন লাল আভা। সূর্য উঠি উঠি করছে। ভোরের পাখিরা স্বাগত জানায় প্রাতঃভ্রমণকারীদের।
শরীর ফিট রাখতে এ লেক ধরে দৈনিক অনেকেই প্রাতঃকালীন ভ্রমণে বের হন। অনেকে সকাল-বিকেল দুই বেলা হাঁটতে বের হন। কেউ চিকিৎসকের পরামর্শে, কেউ বা নিজে থেকেই শরীরের ঘাম ঝরাতে ছুটে আসেন খোলা জায়গায়, কোনো পার্কে বা উদ্যানে।
প্রাতভ্রমণে আসা সরকারি চাকুরীজীবি বাচ্চু খান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায়ই এই লেক পাড়ে হাটতে আসি। এই লেকটি হওয়ার পর অনেক মানুষ সকাল এবং বিকেলে নিয়ম করে এখানে হাটতে আসে। অনেক্ক্ষণ সময় নিয়ে হাঁটা যায় এখানে, তিনি এজন্য এই লেকটির নির্মাতা প্রয়াত জনপ্রশাসন মন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ ১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কে ধন্যবাদ ও কৃকৃতজ্ঞতা জানান।
লেক পাড়ে এসে দেখা যায় ,এখানে ওখানে দলবেঁধে শরীরচর্চা করছেন অনেকে। কেউবা হাঁটা শেষ করে বেঞ্চে একাকী বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। মুক্তমঞ্চ চত্বর সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে শরীরচর্চা কেন্দ্র হিসেবে। নানাবয়সী মানুষের আড্ডা, সংগীত অনুষ্ঠান কী না হয় মুক্তমঞ্চে।
গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি। পাতার ফাঁক গলিয়ে সূর্যের আলো একসময় পৌঁছে যায় মাটিতে। বৃক্ষতলে রৌদ্রচ্ছায়া। কী অপরূপ সে দৃশ্য! যেন শিল্পীর নিঁপুণ হাতে আঁকা ছবি। লেকের ভিতরে বহুমুখী চলাচল।
দুপুরের দিকে ঝিমিয়ে পড়ে মুক্তমঞ্চ। বিকেল গড়াতেই বৈকালিক ভ্রমণকারীদের পদচারণে আবার মুখরিত হয়ে ওঠে নরসুন্দা লেক। উৎসবের দিনগুলোয় মুক্তমঞ্চ বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। পহেলা বৈশাখে, ভালবাসা দিবসসহ নানা উৎসবে মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানের আকর্ষণই আলাদা।
নদীর দুই পাড়ের সৌন্দ0র্য উপভোগ এবং হাঁটাচলা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সুপরিসর ওয়াকওয়ে। এছাড়াও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সামনে অবস্থিত পুকুর প্রাঙ্গণ, মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার সর্বদা মুখর থাকে বিনোদনপ্রেমী মানুষের পদচারণায়।
ফলে মুক্তমঞ্চ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ঘিরে গড়ে উঠেছে বাহারি খাবারের দোকান ও টি-স্টল। চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে আগতরা চাইলে গুরুদয়াল কলেজ মাঠে কিংবা নরসুন্দা নদীতে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
সেইসঙ্গে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ারের চূড়ায় উঠে এক নজরে দেখে নিতে পারেন কিশোরগঞ্জ শহরের রূপ বৈচিত্র্য। এ ছাড়াও পৌরবাসীদের চিত্তবিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করতে গৌরাঙ্গবাজার সেতুর পশ্চিমে একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
মানুষ এখন অনেক বেশি পরিবেশ সচেতন। নগর জীবনকে স্বস্তি দিতে প্রয়োজন বিনোদন কেন্দ্রের। নরসুন্দা লেক হোক আরো সবুজ ও সুন্দর, এটিই কিশোরগঞ্জ বাসির প্রত্যাশা।