মাঠের স্ট্যাম্প ভাঙ্গা আর অ্যাম্পায়ারের সাথে অশোভন আচরণের পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সেখানে তাকে ‘ভিলেন’ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন তার স্ত্রী উম্মে আল হাসান।
শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ একটি খেলায় আম্পায়ার এলবিডব্লিউ’র আবেদন মেনে আউট না দেয়ায় লাথি মেরে স্ট্যাম্প উড়িয়েছেন মোহামেডানের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এরপর আম্পায়ার ইমরান পারভেজের দিকে তেড়ে যান ও বিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে তাকে।
ওই ঘটনায় একটি স্ট্যাটাসে ভক্তদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাকিব আল হাসান। তবে সাকিব পত্নী উম্মে আল হাসান, যিনি শিশির নামেও পরিচিত, মনে করেন, মিডিয়ায় প্রধান ইস্যুকে চাপা দিয়ে বরং সাকিবের রাগের বিষয়টিতে দেখানো হচ্ছে। সব সময়ের মতো এখানেও সাকিবকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় শনিবার মধ্যরাতে সাকিব উম্মে আল হাসান লিখেছেন, ‘আমি এই ঘটনা মিডিয়ার মতো করেই উপভোগ করছি, অবশেষে টেলিভিশনে কিছু খবরও দেখা যাচ্ছে! আজকের ঘটনায় যারা পুরো চিত্র পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছেন, সেরকম কিছু মানুষের সমর্থন পেয়ে ভালো লাগছে যে, সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অন্তত একজনের সাহস আছে।’
‘কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখানে আসল ইস্যুটিকে চাপা দিয়ে মিডিয়া শুধুমাত্র তার রাগ প্রকাশের বিষয়টিকে তুলে ধরছে। এখানে আসল বিষয়টি হলো আম্পায়ারদের নজরকাড়া সিদ্ধান্ত! হেডলাইনগুলো দুঃখজনক। আমার মনে হয়, এটা তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে চলা একটা ষড়যন্ত্র, যেখানে সব ঘটনাতেই তাকে ভিলেন হিসাবে তুলে ধরা হয়।’
‘আপনি যদি ক্রিকেট ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক হোন!’ তার এই স্ট্যাটাসের প্রায় সাত ঘণ্টা আগে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে খেলার মাঠের ঘটনার জন্য ভক্তদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন সাকিব আল হাসান।
তিনি লিখেছেন, প্রিয় ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, যারাই আজকের ম্যাচে আমার আচরণ দেখে কষ্ট পেয়েছেন বিশেষ করে ঘরে বসে যারা খেলা দেখেছেন, তাদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার মতো অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমনটা মোটেও কাম্য নয়, কিন্তু মাঝে মাঝে প্রতিকূল পরিবেশে এমনটা হতেই পারে। এমন ভুলের জন্য সকল দল, কর্তৃপক্ষ, টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও অর্গানাইজিং কমিটির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজে আমি আর জড়াবোনা। সকলের জন্য ভালোবাসা।
এই টি-২০ ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করছিলেন সাকিব আর ক্রিজে ব্যাটসম্যান ছিলেন আবাহনীর মুশফিকুর রহিম।
এটিই ছিল ম্যাচে তার করা একমাত্র ওভার এবং তিনি মুশফিকুর রহিমকে বল করলে বল পায়ে লাগার পর আবেদন জানান তিনি। কিন্তু আম্পায়ার নেতিবাচক উত্তর দেন। সাথে সাথেই ক্ষিপ্ত হয়ে স্ট্যাম্পে লাথি মেরে তাকে আম্পায়ারের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় টিভি ক্যামেরায়।
এর কিছুক্ষণ পরই আম্পায়ার বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ করলে আবার হাত দিয়ে স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন সাকিব। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে তিনি কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদের সাথেও। পরে দলীয় ক্রিকেটাররা এসে তাকে ড্রেসিং রুমে নিয়ে যান।
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
অনেকে সাকিব আল হাসানের আচরণের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরছেন, অনেকে আবার এই আচরণের সমালোচনা করছেন।
বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় আবদুর রহমান লিখেছেন, ‘জ্বি, সাকিব ঘাড়ত্যাড়া, বেয়াদব। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এমন বেয়াদবের দরকার আছে।’
তবে এর সাথে দ্বিমত করে মোহাম্মদ তুষার লিখেছেন, ‘আম্পায়ার যতই ভুল সিদ্ধান্ত দিক, একজন world-class প্লেয়ার (বিশ্বমানের খেলোয়াড়) থেকে আমরা, এমন আচরণ আশা করতে পারি না। কারণ সাকিব থেকে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে’।
আহমেদ রুবেল খান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সাকিব আজ যা করছে তার জন্য বিসিবি হয়তো তাকে কিছু দিন অথবা কিছু মাসের জন্য নিষিদ্ধ করবে কিন্তু নিম্নমানের আম্পারিং বা পুকুরচুরির দায় কি বিসিবি নিবে’?
মো: কে এইচ শিবলু মন্তব্য করেছেন, ‘বারে বারে সাকিবের এমন আচার-আচরণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি’।
সূত্র : বিবিসি