বিডি ডেস্ক :
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে অস্ত্র উৎপাদন করছে, যা তৈরিতে সহায়তা করছে অন্তত ১৩ টি দেশ। আর এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার নিজ দেশেরই জনগনের ওপর। বলছেন সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা।
মিয়ানমারের উপর পশ্চিমা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও আমেরিকা, ফ্রান্স, ভারত এবং জাপানের মত দেশের নাম পাওয়া গেছে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশের তালিকায়।
এই রিপোর্টে বলা হয়, বিদেশি অস্ত্র কোম্পানিগুলোর সহায়তায় মিয়ানমারে তৈরি এসব অস্ত্র সেখানে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই সেখানে সহিংসতা চলে আসছে।
অভ্যুত্থান বিরোধীরা যারা নির্বাচিত সরকারের জন্য আন্দোলন করছেন তারা সামরিক শাসন প্রতিরোধে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগ দিয়েছে।
মিয়ানমার বিষয়ক এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিজেরাই নানা ধরণের অস্ত্র উৎপাদন করতে পারে আর তারা এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে সেদেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর। জাতিসংঘভুক্ত কয়েকটি দেশ এখনো মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে বলে স্পষ্ট বলা হয়েছে রিপোর্টে।
এসব বিদেশি অস্ত্র কোম্পানিগুলো মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে সীমান্ত প্রতিরক্ষার নামে অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। এমনকি তাদেরকে ট্রেনিংও দিচ্ছে। অথচ মিয়ানমারে কখনোই কোন ধরনের বিদেশী রাষ্ট্রের আক্রমণ ঘটেনি। এমনকি ১৯৫০ সালের পর থেকে মিয়ানমার কোন দেশের কাছে কখনো অস্ত্র বিক্রি করেনি। সুতরাং তারা যত অস্ত্র কিনছে বা তৈরি করছে তার সবই ব্যবহার করা হচ্ছে সেদেশেরই নিরস্ত্র সাধারন মানুষের ওপর।
সরকারি হিসাবে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থান থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ২৬০০ মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন প্রকৃত নিহতের সংখ্যা এই হিসেবের থেকে ১০ গুণেরও বেশি।
বিবিসির বার্মিজ শাখার প্রধন বলছেন, প্রথমে মনে হয়েছিল মিয়ানমার জান্তা সরকার বিরোধীদের খুব সহজেই দমন করে ফেলবে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহীরা বেশ সফলতা পেয়েছেন। বিদ্রোহীদের যে জিনিসটার অভাব রয়েছে তা হল আকাশ শক্তি। জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের ওপর আকাশ আক্রমণ করলেও বিদ্রোহীরা সেটা পারছেনা।
অভ্যুত্থানের পর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা মিয়ানমার শাসকদেরকে স্নাইপার রাইফেল, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র, গ্রেনেড লাঞ্চার, গ্রেনেড, বোমা এবং মাইন উৎপাদনে কোন ধরনের বাঁধা দিতে পারেনি।
তথ্য প্রমাণ, স্যাটেলাইট ছবি এবং সাবেক সেনাসদস্যদের সাক্ষাৎকারে এটা প্রমাণিত যে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের আগেও সেখানে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য জাতিগুলোর ওপর মিয়ানমারের নিজস্ব তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি কুখ্যাত ইন ডিন গণহত্যা যেখানে ১০ জন নিরীহ রোহিঙ্গাকে বিনা কারণে হত্যা করা হয় সেখানেও সৈন্যদের কাঁধে মেড ইন মিয়ানমার রাইফেল বহন করতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি আলোচিত সাগাইন রাজ্যে একটি স্কুলের উপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বোমা এবং গোলা নিক্ষেপের ঘটনায়ও দেখা গেছে অস্ত্র গুলো মিয়ানমারেই তৈরি হয়েছে।
এছাড়া অবিস্ফোরিত বোমা, কিছু গোলার খোলস দেখে প্রমাণিত হয়েছে যে সেগুলো অস্ট্রিয়াসহ জাতিসংঘ ভুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে মিয়ানমারে এসেছে।
এই রিপোর্ট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব অস্ত্র উৎপাদনের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে বেশ কিছু দেশের নাম এসেছে:
✪ অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল কপার এবং লোহা এসেছে চীন এবং সিঙ্গাপুর থেকে
✪ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন, ফিউজ, বৈদুতিক ডোটোনেটর এসব এসেছে রাশিয়া এবং ভারত থেকে
✪ মিয়ানমার অস্ত্র কারখানার যন্ত্রপাতিগুলো এসেছে জার্মানি, জাপান, ইউক্রেন এবং আমেরিকা থেকে
✪ অস্ত্র প্রোগ্রামিং এর সফটওয়্যার এসেছে ইজরায়েল এবং ফ্রান্স থেকে
✪ সিঙ্গাপুর এসব অস্ত্র সরবরাহের হাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্তেও তারা কখনোই অস্ত্র উৎপাদন হ্রাস করেনি। ১৯৮৮ সালে যেখানে অস্ত্র কারখানার সংখ্যা ছিল ৬ টি। তা এখন বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ২৫ টি তে।