বিডি বিশেষ প্রতিবেদক :
ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘ঘুষের টাকা’সহ আটক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কক্সবাজারের স্পেশাল জজ আদালত।
সোমবার দুপুর দেড়টায় দুদকের দায়ের করা মামলায় ওই রিমান্ড আদেশ দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল।
আদালত সূত্র জানায়, ঘুষের টাকা সহ আটক হওয়া আতিকের বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করে। এ মামলার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার দুদক কার্যালয়ের মামলার সূচনা হলো।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন রবিবার বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়।
দুদকের কক্সবাজারের আই্নজীবি আবদুর রহিম বলেন, আটক আতিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকার উৎস এবং ভূমি অধিগ্রহন শাখার নানা প্রকার দুর্নীতি জানার চেষ্টা করবে দুদক।
১ জুলাই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটকের পর ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ সার্ভেয়ার আতিককে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করে জেলা প্রশাসন। সরকারি কর্মচারি বিধি মতে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজের একটি অভিযোগ সাধারণ ডায়রি হিসেবে নথিভুক্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। নিয়ম মতে, দুদকই সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাতেই সোমবার আতিককে শ্যোন এরেষ্ট দেখানো হয়। এই মামলায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
অন্যদিকে আতিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে উল্লেখ করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আল আমিন পারভেজ বলেন থানায় ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে তা শুরু হয়েছে। তিনি কিভাবে, কোথা থেকে এতো টাকা পেলো এবং তা ঢাকায় কেন নিয়ে গেছে- সব বিষয়ে উৎঘাটন করতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্যাগ ভর্তি ২০ লাখ ঘুষের টাকা নিয়ে ঢাকা শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান ধরা পড়ে। শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই তাকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠালে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার মডেল থানায় তাকে সোপর্দ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। তার ব্যাগ স্ক্যান করলে ব্যাগের ভেতর বিপুল পরিমাণ টাকার স্তূপ দেখা যায়। তাকে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্যরা ব্যাগসহ আটক করে বিশেষ কক্ষে বসিয়ে রাখেন। কিন্তু এর ৫ মিনিটের মাথায় রহস্যজনক কারণে সকাল পৌনে ১০ টার ইউএস বাংলার ফ্লাইটে চেপে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেখানে তল্লাশিতে ব্যাগে টাকার উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে আটক করেন। পরে আতিকুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেল সাড়ে চারটার আরেকটি ফ্লাইটে তাকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে আতিকুর রহমানকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে। তিনি সহ ৩ জন সার্ভেয়ার মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন। ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ আতিকুর রহমান ওই অর্থ ঘুষ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টজনেরা। কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। অধিগ্রহণ কাজে সহযোগিতা করা সার্ভেয়ারদের মাঝে এর আগেও বেশ কয়েকজন নগদ কোটি টাকাসহ দুদকের হাতে গ্রেফতার হন।
আতিক আটকের পর ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় তোলপাড় শুরু হয়। এই ভূমি ক্ষতি গ্রহণ শাখার লুটপাটের বিরুদ্ধে ফুসে উঠছে কক্সবাজারের সাধারণ জনগ।
কক্সবাজার জেলার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বর্তমানে ১২ জন সার্ভেয়ার কর্মরত রয়েছে। এরা সবাই এই ঘুষ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।