চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল পথে ঈদ উপলক্ষে একজোড়া বিশেষ ট্রেন

কক্সবাজার স্টেশনে ১৪ কোটি টাকা আয়

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:৫৪ AM, ০৫ এপ্রিল ২০২৪

সাকলাইন আলিফ :

ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল পথে লাইনে ১০ দিনের জন্য একজোড়া ট্রেন চালাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসা তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, চাঁদপুর থেকে আসা মেঘনা এক্সপ্রেস কক্সবাজার পর্যন্ত চলে আসবে । কক্সবাজার রেল স্টেশন চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। রেলের টিকেট কালোবাজারি বন্ধ করতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।


১৮৫ টাকা দিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যেতে পারবে একজন যাত্রী। কক্সবাজারে নতুন একজোড়া ট্রেন চালুর খবরে দারুন খুশি যাত্রীরা। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন অনেক যাত্রী।
৩ এপ্রিল থেকে আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কোন টিকেট কাউন্টারে বিক্রি হবে না।
জানা গেছে,গতবছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেল পথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। ওই বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে এই পথে রেল চলাচল।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ,ন,ম হেলাল উদ্দিন বলেন,এই রেলপথে ট্রেন চলাচলের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দেশবাসী। অবশেষে মানুষের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। এখন রাজধানী ঢাকা থেকে রেল পথেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আসছেন যাত্রীরা।
তার ওপর ঈদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেন চালু হচ্ছে এই পথে। ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে গেছে অনলাইনে টিকিট বিক্রি। ঢাকা কক্সবাজার রেলপথের যাত্রীরা অনেক খুশি। কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রী নয়না পাল বলেন, এ নতুন রেল পথ ইউরোপ আমেরিকার মত মনে হয়েছে আমার কাছে। তবে রেলের ভেতরে থাকা স্টাফদের ব্যবহার আরো ভালো হতে হবে।
পর্যটন এক্সপ্রেস এ আসাযাত্রী বকুল বলেন, পরিবার নিয়ে আসতেছি অনেক ভালো লাগছে। ঈদের সময় চট্টগ্রাম কক্সবাজারের যাত্রীদের জন্য যে একজোড়া ট্রেন চালু হচ্ছে এতে আমরা অনেক খুশি। আমাদের অনেক উপকারে আসবে।
এবারের ঈদে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম কক্সবাজারের চট্টগ্রাম থেকে ঈদে ঘরমুখো এবং ঈদ পরবর্তী ফেরার জন্য একজোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করছে বাংলাদেশের রেলওয়ে।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন,
বিশেষ ট্রেন ৯ চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭ টায় ছেড়ে এসে সকাল ১০ টা২০ মিনিটে কক্সবাজার পৌছাবে।
বিশেষ ট্রেন ১০ কক্সবাজার থেকে  সন্ধ্যা ৭ টায় ছেড়ে রাত ১০ টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাবে।
এই ট্রেনগুলো কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৮ টি স্টেশনে থামবে। স্টেশনগুলো হচ্ছে, রামু, দুলহাজারা, চকরিয়া,সাতকানিয়া, দোহাজারী, কেরানিহাট, পটিয়া, ষোল শহর, চট্টগ্রাম। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনগুলো দুই মিনিট করে দাঁড়াবে।
এ ট্রেনগুলোতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর চেয়ারের ভাড়া থাকবে ৩৪০ টাকা, শোভন শ্রেণীর ভাড়া থাকবে ১৮৫ টাকা।
কক্সবাজারের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী আরো বলেন,এ ট্রেনগুলো ৮ এপ্রিল থেকে ঈদের দিন ব্যতীত ১৮ তারিখ পর্যন্ত চলাচল করবে।
ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের জন্য বিশেষ একটি সুযোগ এটি। ঈদের পূর্বে লোকজন বাড়িতে আসতে পারবে ঈদের পরবর্তীতে বাড়ি থেকেই যাতে ফিরতে পারে সেজন্য এই বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। টিকেট কালোবাজারি নিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তৎপর থকার কথা জানান স্টেশন ম্যানেজার।
তিনি জানান ,বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার পর্যন্ত আসার সম্ভাবনা আছে।
বিশেষ করে তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, চাঁদপুর থেকে মেঘনা এক্সপ্রেস কক্সবাজার পর্যন্ত চলে আসবে খুব দ্রুত সময়ে।
স্থানীয় স্টেশনগুলো থেকে যাত্রীরা যাতে সহজে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য কমোডর ট্রেন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু এর মাঝে, বিশেষ ট্রেন ও যে দুটি ট্রেন কক্সবাজার চলাচল করছে। পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস এই ট্রেনগুলোর টিকেট বিক্রির কাজ ওইসব স্টেশনগুলো থেকে হবে। খুব দ্রুত পর্যায়ক্রমে সবগুলো স্টেশনের কাজ পুরোদমে চালু হয়ে যাবে।
স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন আন্তঃনগর পর্যটক এবং আন্তঃনগর কক্সবাজার এক্সপ্রেস ১৬ টি কোচ থাকে। সে হিসেবে এক হাজার ১০ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারে। বিশেষ ট্রেনে ৪৮০ জন যাত্রী যেতে পারবে।
এখানে আমরা সেবার মন-মানসিকতা নিয়ে কাজ করি। যাত্রী সেবা দেওয়াই আমাদের কাজ।
২৪ ঘন্টাই আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে আসছি।
দেশের সবচেয়ে সুন্দর আইকনিক স্টেশনে কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।
রাজস্ব আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোন স্টেশনের দিক থেকে কক্সবাজার স্টেশনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এখানে একটি টিকিটের মূল্য স্নিগ্ধা ১৩২৫ টাকা। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬৯৫ টাকা। ২০২০ জন যাত্রীর প্রতিদিন যাতায়াত করছে।
কক্সবাজার স্টেশনের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ১৪ কোটি টাকার মতো আয় হয়েছে।
বিশেষ ট্রেনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
কালো বাজারের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে অনেক সজাগ রয়েছে।
কালোবাজারি প্রশ্নই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শতভাগ টিকেট অনলাইনে থাকবে। কাউন্টারে কোন টিকেট থাকবে না।
আপনি আপনার আইডি দিয়ে নিজের টিকেট ক্রয় করে নিজেই ভ্রমণ করবেন। টিকেট যার ভ্রমণ তার। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে শুধু ঈদের জন্য ৩ এপ্রিল থেকে আগামী ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোন টিকেট কাউন্টারে বিক্রি হবে না।
টিকিটটা আপনি আপনার মোবাইল থেকে রেল সেবা অ্যাপস এর মাধ্যমে কিংবা বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে www.e-ticket railway.bd তে লগইন করে আপনি টিকিট করে নিতে পারবেন।
রেলের টিকেট যাতে কাল বাজারে না হয়। এবং কালোবাজারি রাজাদের সুযোগ নিতে না পারে। সেইজন্য আমি প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন থাকলেও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ছিল না। ২০১০ অনুমোদন পায় এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। ২০১১ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করার পর গত ১১ নভেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পের খরচ ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর রেল লাইনের দৈর্ঘ্য দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার।

আপনার মতামত লিখুন :