শিরোনাম :
উখিয়ায় সংরক্ষিত বন থেকে বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন উখিয়ায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে এডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত “আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে -মুহাম্মদ শাহজাহান পেকুয়ায় বিয়ের দাবীতে প্রবাসীর বাড়িতে তরুণীর বিষপান পেকুয়ায় ব্যবসায়ীকে হামলা ও দোকান লুটপাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন কক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কক্সবাজারে নারীর প্রতি সংহিসতা নিরোধে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল বেতুয়ায় ১৪ বসতবাড়ী জ্বলে-পুড়ে ছাঁইঃক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২কোটি টাকা কক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানি : যুবক গ্রেপ্তার

বিদ্যুৎ না নিয়েই ৯ মাসে ১৭ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ

নিউজ রুম / ৭০ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

বিদ্যুৎ না নিয়েই বিদায়ী অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, চাহিদা না থাকলেও বিগত দিনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এমনকি জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সরকার যখন ঘোষণা দিয়ে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, তখন চারটি উচ্চ ব্যয়ের কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগ সময়েই বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এভাবে পিডিবির গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আর এ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান কমাতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যার দায় জনগণকে বহন করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিøষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম হওয়ায় বিনা টেন্ডারে দায়মুক্তি আইনের আওতায় এক সময়ে উচ্চ মূল্যের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ২০১০ সালে বলা হয়েছিল এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র আপৎকালীন চাহিদা মেটানোর জন্য। তিন বছর পর বিদ্যুৎ নিয়ে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল থেকে আর বিদ্যুৎ নেয়া হবে না। সময়ের প্রয়োজনে এ সিদ্ধান্ত অনেকটা দায় ঠেকে মেনে নেয়া হলেও এটি এখন দেশ ও দেশের জনগণসহ সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য গলার কাঁটা হয়ে গেছে। তিন বছরের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গত ১২ বছরেও বন্ধ করা যায়নি। সম্প্রতি চারটি কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এমন একসময় মেয়াদ বাড়ানো হলো, যখন জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে ঘাটতি হচ্ছে তা সমন্বয় করা হচ্ছে দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। এক দিকে ক্যাপাসিটি চার্জের চাপ অপর দিকে উচ্চ ব্যয়ের বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে এ খাতে ব্যয় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আর এ ব্যয়ের দায় জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। ইতোমধ্যে গত ১২ বছরে আট দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলে বড় অঙ্কের ভর্তুকি গুনতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিডিবিকে, যার দায় জনগণের ঘাড়েই বসবে।

পাওয়ার সেলের সাবেক ডিজি বি ডি রহমত উল্লাহ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কুইক রেন্টাল ও অন্য সব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তাদের চুক্তি অনুযায়ী এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে না পারলে তার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এখানে কোনো কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা না থাকলেও অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র নষ্ট থাকলেও তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয় সমস্যা হলো, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা প্রতি বছর যাচাই করার কথা। আর সে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। প্রতি বছর এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা যাচাই করা হয় কি না সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখানে বড় ধরনের জালজালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে চলছে।

তিনি বলেন, আমার জানা মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই পুরনো। উৎপাদন সক্ষমতা যতটুকু দেখানো হয় ততটুকু নেই। আবার বলা হচ্ছে, উৎপাাদন ক্ষমতা প্রকৃত চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে গ্রিড উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট। ১২ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তাই যদি হয়, তাহলে এ ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কেন এখনো চালু রাখা হচ্ছে। আর কেনই বা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গুটিকয়েক বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীর পকেটে দেয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামে যুদ্ধের সময় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। তখন এ জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হতো। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামের মতো নয়। তার পরেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে অর্থ দেয়া হচ্ছে তা অযৌক্তিক ও অন্যায়।

এ দিকে পিডিবির হিসাব অনুযায়ী গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। কিন্তু চাহিদা ওই হারে বাড়েনি। ফলে উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে না। গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, যেখানে উৎপাদনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি দেখানো হয় এক হাজার ৬৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু এরপরেও উচ্চ মূল্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখা হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ নিতে না পারলেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কোটি কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে গুটিকয়েক বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীর পকেটে চলে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন চুক্তিতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। যার ফলে অনেক বেসরকারি কোম্পানি বসে বসে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বিদ্যুতের সার্বিক উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না বিদ্যুৎ খাতকে। অন্য দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি চড়া দামে আমদানি করতে গিয়ে নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। রিজার্ভের ওপর টান ঠেকাতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধের পর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লোডশেডিং দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রক্ষা হলেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিতরণ কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কবলে পড়বে। ঋণের ভারে ন্যুব্জ পিডিবি আরো রুগ্ণ হয়ে পড়তে পারে। লোডশেডিংকে সাময়িক সমাধান হিসেবে দেখা হলেও লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখলেও ক্যাপসিটি চার্জ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পিডিবি। বেশি উৎপাদন হলে বেশি বিক্রি হয় এতে গড় করে উৎপাদন খরচ কিছুটা কমে আসত। পাশাপাশি সরকারের দেয়া ভর্তুকি মিলিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ সামাল দেয়া হতো।

পিডিবির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদ্যুৎ না নিয়েই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। আগের বছরের প্রথম ৯ মাসে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ৯ মাসে ৬১টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ১১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। একই সময়ে ১২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিপরীতে দিতে হয়েছে ৬৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ভারত থেকে আমদানিকৃত চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ না নিয়েই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৮৭০ কোটি টাকা। ১৬টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।

অপরদিকে আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬২টি আইপিপি ও এসআইপিপি ১১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে ১৯টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চার্জ দিতে হয়েছে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ভারত থেকে আমদানিকৃত চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চার্জ ও অন্যান্য মাশুল দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিক্রির মধ্যে বিশাল তারতম্য রয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে সাড়ে ৮ টাকার মতো। আর পিডিবি পাইকারি ৫.০৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। ক্রয় বিক্রয়ের ভারসাম্য আনতে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকির কথা বলা হলেও কাগজে কলমে ঋণ হিসেবে দিয়ে এসেছে সরকার। ওই টাকার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান ব্যবস্থায় এই ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে।
এদিকে জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সাতটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদান বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ডিজেলচালিত এ সাত বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মাসে পরিশোধ করতে হবে ১৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছয়টি বেসরকারি ও একটি সরকার মালিকানাধীন কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে বলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১০টি। যার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১২৮৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পিডিবির মালিকানাধীন তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের (৬০ মেগাওয়াট) জন্য কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় না। অন্য সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে।

১৩ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ৭০ হাজার কোটি টাকা : বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রিড বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন গত ১৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। গড় উৎপাদন গ্রীষ্মকালে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। শীতে কমে সাত থেকে আট হাজারে নেমে আসে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার একটা বড় অংশ বসে থাকে। বিদ্যুৎ না কিনলেও চুক্তি অনুসারে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে একটা চার্জ দিতে হয়। গত ১৩ বছরে বিদ্যুতে এ ধরনের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি দিয়ে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব।

বর্তমানে ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এই বিদ্যুতের আমদানি ব্যয়ের ৪০ শতাংশই যায় ক্যাপাসিটি চার্জে। বিশেষ করে শীতকালে যখন চাহিদা কমে যায় তখন আমদানি কমে আসে। বিদ্যুৎ কম এলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। ২০১৩ সালে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। চুক্তি অনুসারে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারতকে দেয়া ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯২১ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৪০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ সালে ছিল ৬২৭ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ সালে ৯৮৭ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ সালে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।

‘বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটারনাল ডেবট বা বিডব্লিউজিইডি’-এর গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ৬৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন-ক্ষমতাসম্পন্ন শীর্ষ ১২টি কোম্পানি আট হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে, যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রদত্ত মোট ক্যাপাসিটি চার্জের ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ তালিকার এক নম্বরে রয়েছে সামিট গ্রুপ। তাদের পরে পর্যায়ক্রমে রয়েছে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, ইডিআরএ পাওয়ার হোল্ডিং, ইউনাইটেড গ্রুপ, কেপিসিএল, বাংলা ট্র্যাক, ওরিয়ন গ্রুপ, হোসাফ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, শিকদার গ্রুপ ও এপিআর এনার্জি।

বিশ্বব্যাপী বিশেষ প্রয়োজনে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস রাখা হচ্ছে আদর্শ নিয়ম। জাপানে ১০ শতাংশ অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এটা বেশি হলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এসবের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে গিয়েই বিদ্যুৎ খাত দেউলিয়া হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পিডিবির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদ্যুৎ না নিয়েই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। আগের বছরের প্রথম ৯ মাসে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ৯ মাসে ৬১টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ১১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। একই সময়ে ১২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিপরীতে দিতে হয়েছে ৬৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ভারত থেকে আমদানিকৃত চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ না নিয়েই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৮৭০ কোটি টাকা। ১৬টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।

অপরদিকে আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬২টি আইপিপি ও এসআইপিপি ১১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে ১৯টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চার্জ দিতে হয়েছে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ভারত থেকে আমদানিকৃত চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চার্জ ও অন্যান্য মাশুল দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিক্রির মধ্যে বিশাল তারতম্য রয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে সাড়ে ৮ টাকার মতো। আর পিডিবি পাইকারি ৫.০৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। ক্রয় বিক্রয়ের ভারসাম্য আনতে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকির কথা বলা হলেও কাগজে কলমে ঋণ হিসেবে দিয়ে এসেছে সরকার। ওই টাকার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান ব্যবস্থায় এই ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে।
এদিকে জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সাতটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদান বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ডিজেলচালিত এ সাত বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মাসে পরিশোধ করতে হবে ১৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছয়টি বেসরকারি ও একটি সরকার মালিকানাধীন কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে বলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১০টি। যার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১২৮৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পিডিবির মালিকানাধীন তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের (৬০ মেগাওয়াট) জন্য কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় না। অন্য সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর