ঈদ ও বৈশাখের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক পর্যটক

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:০৩ PM, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

বিডি প্রতিবেদক :

তীব্র গরম উপেক্ষা করে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামে। প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। প্রকৃতির ছোঁয়ায় আনন্দ করে সময় পার করছেন তারা। ঈদের পর থেকে চার দিনে কক্সবাজারে ৪ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের শতভাগ কক্ষ বুকিং ছিল সোমবার পর্যন্ত ।  মঙ্গলবার থেকে কমতে শুরু করেছে।আগত পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালু হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
ছুটির সময়ে বেড়ানোর জন্য সকলেরই আকর্ষণ দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। যেখানে রয়েছে পাহাড় আর সাগরের চমৎকার পরিবেশ আর প্রকৃতি। সাগরের নীল জলরাশি, সৈকতের বিশাল বালিয়াড়ি, পাহাড় আর সাগরের মাঝখানে বয়ে চলা মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও পাহাড়ের মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের নিয়ে আসে কক্সবাজারে। তা যদি ঈদ  কিংবা পহেলা বৈশাখের টানা ছুটি হয় ,তখন তো স্বাভাবিকভাবেই ঢল নামবে পর্যটকদের। এবার তাই হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসেকক্সবাজারে।
টুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঈদের পরদিন  থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। সোমবার পর্যন্ত প্রায় চার লাখ পর্যটক আসে কক্সবাজারে। তিনি বলেন, টানা ছুটিতে কেউ এসেছেন পরিবারের সাথে, কেউ স্বজন ও বন্ধুদের সাথে সমুদ্রজলের নীলদিগন্ত ছুঁয়ে দেখতে। আগত পর্যটকদের অনেকে লোনাজলে দাপাদাপির পাশাপাশি কেউ কেউ ঘোড়া, জেটস্কি ও বিচ বাইকে চড়ে বিনোদনে মেতেছেন। আবার কেউ কেউ বিস্তৃত সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছেন ছবি। আর পর্যটকদের পাশাপাশি ঈদ উৎসব উদযাপনে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় দর্শনার্থীরাও। এতে সৈকতের কবিতা চত্তর থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক পারুল, ময়না, হারুন, মৌরি ও ও সুস্মিতা বলছেন, যান্ত্রিক জীবনের একগেঁয়েমি কাটানো এবং ঈদের আনন্দ একটু ভিন্নভাবে উপভোগে তারা সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য্যের টানে কক্সবাজার ছুটে এসেছেন।
রাজশাহী থেকে আসা নাসিম আক্তার মন্টি বলেন ঈদের পর প্রথমবার এসে ভালই লাগছে। বেশি মানুষ হওয়ায় ভালো লাগার পাশাপাশি মনোরম পরিবেশে চমৎকার লাগছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা মনোয়ার হোসেন, রবিউল ইসলাম ও আফরোজা বলেন, প্রচন্ড গরম, তারপরও সাগরের লোনা জলে নেমে ভালোই লাগছে, এখানে সব ঠিক আছে, কিন্তু খাবারের মূল্য বেশি। এটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।
পর্যটকরা সাগরে গোসল করার সময় যেন পানিতে ডুবে না যায়, সাগরের সেই নিরাপত্তায় কাজ করছে লাইভগার্ড কর্মীরা।
সিসিএফ লাইভ গার্ড সদস্য ওসমান বলেন, পর্যটকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে ঈদের পর থেকে আমাদের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে।

হোটেল মালিক সমিতির নেতা আবদুর রহমান বলেন,রমজানের পুরো এক মাসের খরা কাটিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে আশানুরুপ পর্যটক সমাগম ঘটায় খুশি হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সহ আমরা সবাই খুশি। কক্সবাজারে ট্রেন যুক্ত হওয়ার পর পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। ট্রেন চালু হওয়ার ফলে আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটকরা চাইলে অনলাইনে বুকিং দিয়ে আসতে পারেন। তবে দালাল থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
হোটেল  কক্স টুডের জিএম আবু তালেব শাহ বলেন, সোমবার পর্যন্ত আমাদের সবগুলো রুম বুকিং ছিল। মঙ্গলবার থেকে কমতে শুরু করেছে। গরম উপেক্ষা করে পর্যটকরা এসেছেন কক্সবাজারে।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, সোমবার পর্যন্ত শতভাগ বুকিং ছিল হোটেলগুলো, সোমবার অফিস খোলার কারণে পর্যটকরা ফিরে যাচ্ছে না আস্তে আস্তে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের এডিশনাল ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন,আগত পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, ২৫ টি সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করার পাশাপাশি পর্যটকদের হয়রানী রোদে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে টুরিস্ট পুলিশ।
আগত পর্যটকরা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহার, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক এবং শহরের বার্মিজ মার্কেটসহ জেলা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে মনোরম দৃশ্য দেখে আর প্রকৃতি উপভোগ করে প্রশান্তি নিচ্ছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, ঈদের পর থেকে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে ছিল। সোমবার ছিল ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার কক্সবাজারে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এআবহাওয়াবিদ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহীন ইমরান জানান, পর্যটকরা যাতে কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয়, বেশি ভাড়া কেউ আদায় করতে না পারে সেজন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তিনটি টিম ঈদের পরদিন থেকে কাজ করছে।
দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

আপনার মতামত লিখুন :