জঙ্গলো’ শহরে

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৫৭ PM, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

তোফায়েল আহমদ :

প্রথম দর্শনে এক ‘জঙ্গলো’ শহরে এসেছি বলে মনে হচ্ছে। আরো মনে হচ্ছে এখানকার মানুষগুলো এতদিনেও রয়ে গেলেন ‘জঙ্গলো’। একটু স্মার্ট ক্যামনে হলেন না! রাস্তার ধারের ফুটপাতের উপরে চলাচলের পথে পথে বিশাল বিশাল আঁকা বাঁকা গাছ। এসব গাছের কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে চোখের সামনেই দেখছি।
চেন্নাই এপোলো হাসপাতালে যাতায়াতের রাস্তার ফুটপাতে আমি নিজেও গাছের সাথে দুইবার মাথায় ব্যথা পেয়েছি। একবার এমন ব্যথা পেয়েছি যে, রাগের বশে এখানকার কতৃপক্ষের লোকজন কে চিল্লিয়ে দুটু শব্দ বলেও ফেলেছি। ভাগ্যিস তারাতো আর আমার এমন কঠিন ভাষা বুঝবেন না। যেমনি এখানকার বড্ড কঠিন তামিল ভাষা আমি বুঝছি না।
যাই হোক আজ শংকর নেত্রালয় হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরার পথে পথে দেখেছি আরো বিশাল বিশাল গাছ। অনেক বড় বড় গাছগুলো যেন এমনই বেআক্কেল যে- সবই ফুটপাতের চলাচলের জায়গাটুকু দখল করে রয়েছে। পথিকদের যাতায়াতের সময় মাথা নিচু করতে হয় অনেকগুলো গাছের গোড়ায়।
আবার একটা বিশাল গাছ দেখলাম চেন্নাই পুলিশ সদর দফতর সংলগ্ন এলাকায়। গাছটি প্রধান সড়কের প্রায় এক চতুর্থাংশ জায়গা জুড়ে কোমর ভাঙা হয়ে উপরে উঠেছে। ত্রিমুখী রাস্তাটির এখানেই আজ বিকালে একটি কাভার্ডভ্যান কোমর ভাঙা গাছটির জন্য আটকা পড়েছিল অনেকক্ষন। একারণে আমাদেরও আটকা পড়তে হয়েছে। কিন্তু এমন ‘ বেআক্কেল ‘ গাছটি কেটে যানবাহন ও লোকজনের সহজ যাতায়াতের ব্যবস্হা নেয়া হয় না।
চেন্নাই শহরের পথে পথে এরকম স্বাভাবিক যাতায়াত ব্যাহত করার গাছের সংখ্যা অগনিত। কিন্তু কাটাকাটি হয় বলে মনে হয় না। হলেতো আর এরকম চোখে পড়ত না। আমাদের এখানে এরকম দৃশ্য হয়তোবা বিরল। থাকলেও সৌন্দর্যহানি অথবা ‘জনস্বার্থে’র কথা বলে কেটে ফেলা হত। অথচ ভারতের প্রচন্ড গরমের শহর চেন্নাই হলেও এখানে গরম অনুভূতি এমন প্রচন্ড নয়।
আমার মনে হচ্ছে, অন্যতম প্রধান কারণ গাছ-গাছালি। আমরা শংকর নেত্রালয় (আন্তর্জাতিক মানের চক্ষু হাসপাতাল) থেকে রাস্তা আর ফুটপাত ধরে হেঁটে হোটেলে এসেছি পুরোটাই গাছের ছায়ায়। বিকেলের রোদের এমন তীব্রতা সত্বেও আমরা স্বাভাবিকভাবে হেঁটেছি। গাছ- গাছালি গরমের প্রচন্ডতাকে হয়তোবা কিছুটা হলেও সামাল দিচ্ছে।
এখানে এমন পুরনো এবং বড় গাছের সংখ্যা বেশি যে, মনে হচ্ছে পুরো ভারতের সবগুলো কোকিল এখানে এসে বসবাস করছে। রাস্তার দুই ধারে গাছে গাছে ভরা। পাখি আর পাখি এখানে। সেই শেষ রাত থেকে সারাটি দিন কোকিলের ডাক শুনতে শুনতে সময়টা গড়িয়ে যায়। রাস্তাগুলো একদম ফাঁকা। রাস্তায় লোকজনের চলাচল কম। এখানে ব্যাটারি চালিত টমটম বলি আর রিকশা বলি এসবের অস্তিত্বও নেই। ## ##
তোফায়েল আহমদ, চেন্নাই, তামিলনাড়ু, ভারত -২৪ এপ্রিল ‘২৪

 

দৈনিক কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদের এফবি থেকে নেয়া

আপনার মতামত লিখুন :