দেলওয়ার হোসাইন, স্টাফ রির্পোটার পেকুয়া ;
খোলা বাজারে চাল আটা (ওএমএস) কিনতে গভীর রাত থেকে নিন্ম আয়ের মানুষের ঢল নেমেছে পেকুয়ায় ওএমএস ডিলারের দোকানে। এসময় বাচ্চা কোলে নিয়ে বেশ কয়েকজন মাকেও অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এসময় বয়স্ক নারী পুরুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। মধ্যরাতে নারী পুরুষের দীর্ঘ এ সারি দেখে অবাক হলেও সত্যিই এমন দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের ওএমএস ডিলার রফিক আহমদের দোকানের সামনে থেকে । রাত যতই গভীর হয় নারী পুরুষের লাইন ততই দীর্ঘ হতে থাকে। একসময় লাইনে উপস্থিতির সংখ্যা হাজারো নারী পুরুষ ছাড়িয়ে যায়।
স্থানীয়ারা জানান গত মাস ধরে ওএমএস এর চাল কিনতে এভাবে রাত জেগে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে নিন্ম আয়ের মানুষেদের।
পেকুয়া বাজারের নৈশ্য প্রহরী আখতার আহমদ জানান গত এক মাস ধরে রাত ১২ টা থেকে পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বয়স্ক পুরুষ মহিলা বাচ্চা নিয়ে সারা রাত টোকেন নেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সকাল ১০ চালের ডিলার দোকান খুললে তাদের টোকেন বিতরণ করে, এ টোকেন সংগ্রহ করতে সারা রাত তাদের যে কষ্ট এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা।
বাচ্চা কোলে লাইনে বসা এক মহিলা জানান স্বামী কাজের খোঁজে এক মাস আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন এখনও ফিরেনি, এদিকে ৩টি বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার, বাধ্য হয়ে গভীর রাতে চাল কিনতে সিরিয়াল নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। রাতে বেলায় ঠান্ডায় বাচ্চা অসুস্থ হতে পারে এ কথা বললে তিনি বলেন, এক বাচ্চা অসুস্থ হলে কি আর করা অন্য বাচ্চাদের কান্না থামাতে এ তেমন কিছু নয়, তাদের মুখে খাবার তোলে দিতে এটুকু কষ্টত সইতে হবে।
মাঝ বয়সী এক মাহিলা তার এক মেয়েকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে পাশে তিনি চটের বস্তা বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন, এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন তার স্বামী অসুস্থ শারীরিক ভাবে অক্ষম হওয়ায় কাজ করতে পারেনা, ঘরে ৫ টি বিবাহ যোগ্য মেয়ে খুবই অভাব অনটনে দিন যাচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে এক মেয়েকে নিয়ে ওএমএস এর চাল আটা কিনতে মধ্যরাতে লাইনে দাঁড়িছে। লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল ১০ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, সকাল ১০ টায় যখন ডিলারের দোকান খুলবে তখন যেন আগে ভাগে সিরিয়াল পান সেজন্য রাতে আগে থেকেই লাইনে দাঁড়ানো।
ওএমএস এর চাল কিনতে কেন এত গভীর রাত থেকেই অপেক্ষা করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে এক বদ্ধ জানান, সপ্তাহে ৫ দিন খোলা বাজারে চাল আটা বিক্রি করলেও মানুষের ভিড়ের কারণে চাল আটা সংগ্রহ করা অসাধ্যকর হয়ে পড়ে তাই এক রাত না ঘুমিয়ে পরের দিনের জন্য টোকেন সংগ্রহ করে নিতে গভীর রাতে সিরিয়ালের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। এখানেও উপস্থিতি বেশি হলে অধিকাংশ মানুষ টোকেন ছাড়া বাড়ি ফিরতে হয়। সারা রাত জেগে টোকেনের জন্য অপেক্ষাই যেন পন্ডশ্রম।
টোকেন সংগ্রহ করতে আসা বৃদ্ধ বদিউল আলম বলেন, আমরা সারা রাত জেগে টোকেন নেয়ার জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু ডিলার তার ইচ্ছে অনুসারে টোকেন বিতরণ করায় অনেকেই খালি হাতে ফেরত যেতে হয়। তিনি বলেন গত দু সপ্তাহ ধরে আমি রাত জেগে অপেক্ষা করছি টোকেন পাচ্ছি না।
সারা দেশে খোলা বাজারে চাল আটা বিক্রির যে নিয়ম রয়েছে পেকুয়া বাজারের ওএমএস ডিলার রফিক আহমদ এক ভিন্ন নিয়ম চালু করেছে। রাত জেগে সাধারণ মানুষকে চাল আটা কিনতে অপেক্ষা করতে হয় পরের দিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত। এতে বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষের ভোগান্তির শেষ নেই, বাচ্চা কোলে নিয়ে আসা মহিলাদের সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কোলে থাকা শিশুরা।
এবিষয়ে ডিলার রফিক আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সব সুবিধা মানুষের দেখলে হবেনা ডিলারের সুবিধা অসুবিধাও দেখতে হবে। আমি পুরো এক সপ্তার টোকেন একদিনে বিতরণ করে থাকি তাই লোকজন বেশী হয়। সরকার খোলা বাজারে চাল আটা বিক্রির নিয়ম প্রতিজন ৫ কেজি চাল ৫ কেজি কিনতে ডিলারের কাছে আসবে বাংলাদেশী নাগরিক হলেই তিনি এ সুবিধা ভোগ করবেন কিন্তু আপনার দোকানে কেন ভিন্ন নিয়ম, জবাবে তিনি বলেন সব নিয়ম দিয়ে চলেনা, যদি সব নিয়ম দিয়ে চলতো তাহলে দেশের এ অবস্থা হতোনা।
এবিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শাহেদুল করিম বলেন,ওপেন সেইল মার্কেটে যে কেউ চাল আটা কিনতে পারে দৈনিক একজন ডিলার ২ শত জনকে বিক্রি করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। পেকুয়া বাজারের একজন ডিলারের ক্রেতার চাপ বেশী থাকায় এক সপ্তার টোকেন এক সাথে বিতরণ করছে।