
সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
অনিয়ম, দুর্নীতি ও কর্মী নিপীড়নের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এনজিও কোস্ট ফাউন্ডেশনের চাকরিচ্ছুত ৭৮ জন কর্মী।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা বকেয়া বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের কক্সবাজার অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক কর্মসূচি সমন্বয়কারী মো. আশেকুল ইসলাম।
এসময় সাবেক কর্মীরা জানান, কোস্ট ফাউন্ডেশন বর্তমানে বাংলাদেশে পরিচিত ও স্বনামধন্য একটি এনজিও হলেও, প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে চলছে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা।
কর্মীরা নির্যাতিত হলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত। অনেক কর্মীকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করে তাদের ন্যায্য পাওনা আত্মসাৎ করার নজিরও রয়েছে।
নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর স্বেচ্ছাচারিতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নীরবতার ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান অভিযোগকারীরা ।
নির্বাহী পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় বিরক্ত ও হতাশ হয়ে নির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. তোফায়েল আহমেদ পদত্যাগ করেছেন জানিয়ে সাবেক কর্মীরা এসময় বলেন – তার নির্দেশ অমান্য করা, নির্বাহী কমিটির বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বিল-ভাউচার অনুমোদন ছাড়াই খরচ করার কারণে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আঞ্চলিক পরিচালক রুবেল হাসান রাশেদ একজন নারী লিপ্সু যার বিরুদ্ধে একজন নারী কর্মীকে নির্যাতনের সুষ্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জানানো হয় অসংখ্য অভিযোগ।
অল্প বেতনে চাকরী নিয়ে কোস্টে ঢুকে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, সহকর্মীদের নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত এবং কোস্টের ব্যানারে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ অর্জনের কথা তুলে ধরা হয় হয়।
এছাড়াও জাহাঙ্গীরের গাড়ি-বাড়ি ও জমি এবং অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার সাথে তার বেতনের কোন সঙ্গতি নেই বলে জানিয়ে তা তদন্তের দাবী জানানো হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের বক্তব্য না মিললেও সহকারী পরিচালক ও কক্সবাজারে এনজিওটির অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো বায়বীয় ও ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, ” সংবাদ সম্মেলন করে কোনো কথা বললেই তা সত্য হয়ে যায় না, এসবের অভিযোগের সত্যতা নেই। প্রমাণ থাকলে দেখাতে বলেন, সেগুলো উপস্থাপন করুক ।”
সংবাদ সম্মেলনে বকেয়া ৩ কোটি টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার দাবী সহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের ও তাদের জামিনদারদের চেক, স্টাম্প ও মূল সনদপত্র ফেরত, পূর্বে যাদেরকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে-তাদেরকে পুনর্বহাল করা অথবা তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও স্টাফ সিকিউরিটি ফান্ড ফেরত দেওয়া, কোস্ট ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির তদন্ত, পদত্যাগকারী কর্মীদের হয়রানি বন্ধ, মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করা, একটি নিরপেক্ষ ও যথাযথ তদন্তের জন্য কোস্ট ফাউন্ডেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা, নারী কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান করে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা সহ ১১ টি দাবী উত্থাপন করা হয়।
চকরিয়ার সাবেক এলাকা ব্যবস্থাপক আবু ছালেক, পেকুয়ার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সুজন কান্তি দে, খুটাখালীর সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক এসএম শফিউল কাদের, সোনারপাড়ার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সরওয়ার কামাল, মরিচ্যা শাখার ব্যবস্থাপক জাহেদুল ইসলাম, মাতারবাড়ি শাখার মাঠকর্মী শাহনাজ পারভীন, মরিচ্যা শাখার সাবেক মাঠকর্মী মো. তারেক, কামরুল ইসলাম কায়েস, চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান, পেকুয়া শাখার সাবেক মাঠকর্মী মোরশেদ আলম সেলিম, মরিচ্যা শাখার সাবেক শাখা হিসাব রক্ষক মো. ইউনুস কুতুবী সহ আরো অনেকেই এসময় উপস্থিত ছিলেন।