বিডি প্রতিবেদক উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মরিচ্যায় একটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে ২০২৩ সালের অগ্রিম করা ৪০টি বাল্যবিয়ের তথ্য পায় উপজেলা সমবায় অফিসার আল মাহামুদ হোসেন। কাজী অফিসে এক বাল্য বিয়ের খবর নিতে গিয়ে হাতেনাতে জালিয়াতি করে যাদের ২০২৩ সালে ১৮ বছর বয়স হবে এই ধরনের অগ্রীম ৪০টি বিয়ের তথ্য পান।
জানাগেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় এক সচেতন ব্যক্তি উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের আলী চান এর নাবালিকা কন্যার সাথে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার মানিক পুরের ছৈয়দ আলমের ছেলের সাথে বাল্যবিয়ের খবরটি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল মাহমুদ হোসেন ও উপজেলা শিশুবিষয়ক সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করার নির্দেশ দেন। একই সাথে তিনি হলদিয়াপালং এর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীকেও একই দির্দেশ দেন। হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী গ্রাম পুলিশ এর সহযোগিতায় বিয়ের অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কনেকে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটি থামিয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন।
সেই সময় কনে তার বিয়ের রেজিস্টার কামিন হয়েছে জানান। বিষয়ের সত্যতা জানতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইউপি চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে কাজী অফিসে গেলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসে। কাজী আকতার হোসেন অপ্রাপ্ত ছেলে মেয়েদের বিয়ে করান অভিনব কৌশলে।
২০২৩ সালে যারা বিয়ের উপযুক্ত অর্থাৎ ১৮ বছর পূর্ন হবে তাদের তিনি আলাদা রেজিস্ট্রার খাতায় বিয়ে করে দিচ্ছেন। সেই রেজিস্টার সবশেষ নিবন্ধন হয়েছে বইয়ে ৪০ নাম্বার পাতায়। সেই পাতায় কোহিনূর আক্তার মনি নামের একজনকে বিয়ে কামিন করিয়েছের যার বয়স ১৮ হবে ২০২৩ সালে। তাই অগ্রীম বিয়ে হিসেবে কাজী আক্তার এইব করেন।
পরে কাজী আখতার হোসাইনের বাল্যবিবাহের অগ্রিম বিয়ের প্রমান পেয়ে ৪টি বালাম সহ তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট নিয়ে যান সমাজসেবা অফিসার।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আখতার হোসাইন হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মাতব্বরপাড়ার ছৈয়দুর রহমানের ছেলে। প্রকৃতপক্ষে জাতিয়পরিচয় পত্রের ঠিকানায় তার কোন ঘর নেই। তিনি রামু উপজেলার খুনিয়াপালং এর বাসিন্দার ও সেখানেই বসবাস করেন । কাজী হওয়ার জন্য তিনি এনএইডিতে হলদিয়াপালং এর ঠিকানা ব্যবহার করেন।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, উপজেলা অফিসারের নির্দেশ পেয়ে বাল্যবিবাহ রোধে মাঝপথ থেকে গ্রাম পুলিশদের দিয়ে বরযাত্রীসহ বিয়ের সজ্জিত গাড়ি আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয়। পরে তাদের উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে হস্তান্তর করা হয়। সমাজসেবক অফিসার তাদের ইউএনও অফিসে নিয়েযান।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল মাহমুদ হোসেন জানান, কাজী অফিস থেকে উদ্ধার করা ওই ৪০টি বিয়ের নিবন্ধিত নিকাহনামায় সময় উল্লেখ করা আছে ২০২৩ সাল। অথচ বিয়েগুলো সম্পন্ন হয়ে গেছে অনেক আগেই এবং তারা সংসারও করছেন। এই ৪০টি সবই বাল্যবিয়ে।
মূলত কনে বা বরের বিয়ের বয়স পূর্ণ না হলে কাজী বেআইনিভাবে এ কাজ করেন। আর বন্ধ হওয়া বিয়েটি ওই তালিকার পঞ্চম বিয়ে বলে সমাজ সেবা অফিসার জানান।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, কাজীকে জরিমানা করা হয়নি। তবে বিয়েটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।