চকরিয়ায় দুর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুত ৪৮ মন্ডপ

নিউজ রুম / ৪৬ বার পড়ছে
আপলোড : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

এম কে দাশ,চকরিয়া:
¡া আগামী ১লা অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতনী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী দুর্গাপুজা। এই দুর্গোৎসবকে ঘিরে সনাতন সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দ ও উৎসাহ বিরাজ করলেও আতংকেও কাজ করছে। গতবছর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সারাদেশব্যাপী ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রক্ষিতে সনাতনীদের মাঝে এই আতংক বিরাজ করছে।

যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকবেনা বলে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। এজন্য নেয়া হচ্ছে নানা তিন ধরনের নিরাপত্তার প্রস্ততি। প্রতিটি মন্ডপে স্থায়ী ভাবে থাকবে আনসার বাহিনী। এছাড়াও পুলিশ ও বিজিবি টহলের পাশাপাশি প্রতি ইউনিয়নে মোবাইল টিম থাকবে। এদিকে, শেষ মহুর্ত্বে চলছে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা। তুলির আঁচড়ে রাঙ্গিয়ে তুলছেন প্রতিমাকে।
চকরিয়া উপজেলা পুঁজা উদযাপন পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, প্রতিমা ও ঘট পুঁজাসহ মোট ৯১ টি পুঁজা মন্ডপে দূর্গোৎসব পালিত হবে চকরিয়ায় । তন্মধ্যে প্রতিমা পূঁজা ৪৮টি আর ঘট পূঁজা ৪৩টি। শান্তিপূর্ণভাবে যাতে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে পারে এ লক্ষ্যে প্রশাসন ও পরিষদের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্ততি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সাথে পূজাঁ উদযাপন কমিটি ও স্ব স্ব মন্ডপের প্রতিনিধিরা একাধিকবার সভাও করেছেন।
চকরিয়া সার্ব্বজনীন কেন্দ্রীয় হরি মন্দির দুর্গা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা.অসীম কান্তি দে (রুবেল) ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু কান্তি দাশ জানান, ঝাঁকজমক পূর্ণভাবে ‘মা’ দূর্গার অর্চনা করার উদ্দেশ্য থাকলেও নিরাপত্তা নিয়ে খুব শংখিত। গত বছর একটা আতংকের মধ্য দিয়ে পূজাঁ উদযাপন করতে হয়েছে। আমরা আনন্দ-উৎসবমূখর পরিবেশে মায়ের আরাধনা করতে চাই। এজন্য প্রশাসনসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তারা আরো বলেন, প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে। শুধু মাত্র রংয়ের তুলিতে মা’কে সম্পন্নরুপে ফুটিয়ে তোলার কাজ বাকি রয়েছে। পেন্ডেলের কাজও শেষ হয়েছে। এবার ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব আরম্ভ হয়েছে। পুঁজায় পাঁচদিন পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্টানের আয়োজন থাকবে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চকরিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুকুল কান্তি দাশ ও পৌরসভা শাখার সভাপতি নারায়ন কান্তি দাশ বলেন, দূর্গা পূঁজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্টান হলেও অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এই উৎসবে সামিল হন। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় চকরিয়া একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এলাকা। কিন্তু গত বছর ধর্ম অবমাননার অবিযোগে দেশব্যাপী সনাতনী সম্প্রদায়ের মন্দির, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর থেকে বাদ যায়নি চকরিয়াও।
তাই সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে পূজোঁকে ঘিরে যে আতংক বিরাজ করছে সেজন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। দুর্গোৎসব যাতে সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় সেজন্য ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সবধরনের সহায়তা করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ বলেন, উপজেলার এবার ৪৮টি মÐপে প্রতিমা পূঁজা এবং ৪৩টি মন্ডপে ঘট পূঁজা অনুষ্টিত হবে। এর মধ্যে চকরিয়া পৌরসভায় ৭টি, উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে ৮টি, কাকারায় ৩টি, বরইতলীতে ৬টি, হারবাংয়ে ৮টি, সাহারবিলে ২টি, ডুলাহাজারায় ৭টি, খুটাখালীতে ১টি, চিরিংগা ইউপিতে ১টি, কৈয়ারবিলে ৩টি ও পূর্ব বড় ভেওলায় ২টি মন্ডপে প্রতিমা পূঁজা অনুষ্টিত হবে। দুর্গোৎসব যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দূর্গোৎসবের সময় সারাদেশে পুজা মন্ডপ, সনাতনী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ভাংচুরসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর থেকে বাদ যায়নি চকরিয়া-পেকুয়াও। তাই পুজা কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরী করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, দূর্গা পূঁজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। মোতায়েন থাকবে পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম। মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশ সদস্যরা টহলে থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা পুঁজা মন্ডপের আশপাশে নিয়োজিত থাকবে। আশা করি সুষ্ঠভাবে দূর্গোৎসব সম্পন্ন হবে।
তিনি আরো বলেন, গত বছর করোনা মহামারির ভয়াবহতার কারণে পুঁজা মন্ডপগুলোতে স্থায়ীভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ের ছিলোনা। এবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেছি যাতে মন্ডপগুলোতে স্থায়ীভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখা যায়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূঁজা। গত বছরের মতো যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রতিটি পুজা মন্ডপে আনসার মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি টহলে থাকবে। এরমধ্যে পূঁজা কমিটি ও সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সাথে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর সরকারীভাবে যে বরাদ্দ দেয়া হয় আশা করি তা পূঁজো শুরুর আগেই চলে আসবে। পূঁজাতে যাতে আইনশৃঙ্খলায় কোন সমস্যা না হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।###


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর