শিরোনাম :
রামু জামিয়াতুল উলুম মাদ্রাসার বার্ষিক দ্বীনি মাহফিল সম্পন্ন, ১৯ জন হিফজ সমাপনকারী সম্মাননা পাগড়ী দেওয়া হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা কার্যক্রম আবারও চালু করার উদ্যোগ জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট জণ আকাংখার পরিপন্থী-ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদ জেলা জামায়াতের বিশেষ রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন গ্রহণ যোগ্য হবে না-ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদ ১২ নভেম্বর কে ‌ উপকূল দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি নিয়ে এক আলোচনা সভা কক্সবাজারে দায়িত্বশীল পর্যটন উন্নয়নে জাতীয় সেমিনার রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে মানবপাচার রোধে একসঙ্গে কাজ করবে আইওএম ও হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল কক্সবাজারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা শুরু আমার দেশে সম্পদের অভাব নাই শুধু আদর্শ মানুষের অভাব–ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদ

শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যসেবায় ধ্বস

নিউজ রুম / ১১৮ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :অর্থনৈতিক সংকটে অচল হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কার হাসপাতালগুলো এখন ভুতুড়ে রূপ নিয়েছে। দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম নাই। ডাক্তার থাকলেও মূলত তাদের কোনো কাজ নেই। ফলে রোগীরা কাতরাচ্ছে। সেবা না পেয়ে অসহায় হয়ে ফিরছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম হাসপাতালে পুরো ওয়ার্ডগুলো অন্ধকার এবং প্রায় খালি। এই হাসপাতালে কিছু রোগী অবশিষ্ট থাকলেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এমনকি সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিকিৎসকরাও তাদের দায়িত্বপালনে হাসপাতালে আসতে বাধার মুখে পড়ছেন।

এএফপি বলছে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক থেরেসা মেরি। নিজের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল হাসপাতালে যান তিনি। তবে বহু কষ্টের পর তিনি হাসপাতালে পৌঁছান।

মূলত কোনো গাড়ি না পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর শেষ পাঁচ কিলোমিটার (তিন মাইল) থেরেসা মেরিকে পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার চার দিন পরই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এখনও নিজের পায়ে দাঁড়ানো তার জন্য বেশ কঠিন। কারণ ডিসপেনসারিতে ভর্তুকিযুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ শেষ হয়ে গেছে, আর তার যন্ত্রণাও রয়েছে আগের মতোই।

৭০ বছর বয়সী মেরি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ডাক্তাররা আমাকে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে বলেছেন, কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার হাঁটু এখনও ফুলে আছে। কলম্বোতে আমার কোনো বাড়ি নেই। (নিজের বাড়িতে যেতে) কতক্ষণ হাঁটতে হবে জানি না।’

এএফপি বলছে, অসুস্থ রোগীদের মধ্যে যাদের কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা প্রয়োজন হয়, তাদেরই চিকিৎসা করে থাকে শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালটি এখন অনেক কম স্টাফ নিয়ে চলছে এবং হাসপাতালের ৩ হাজার ৪০০ শস্যার মধ্যে বহু বেড় এখন খালি পড়ে আছে।

সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া পেট্রোলের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে রোগী এবং চিকিৎসকদের অনেকেই এখন হাসপাতালে আসতে পারছেন না।

শ্রীলঙ্কার সরকারি মেডিকেল অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. ভাসান রতœসিংহাম এএফপিকে বলেছেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য নির্ধারিত যেসব রোগীর শিডিউল দেওয়া রয়েছে তারা হাসপাতালে আসতে পারছেন না। কিছু মেডিকেল স্টাফ ডাবল শিফটে কাজ করছেন কারণ অন্যরা ডিউটি করতে আসতে পারছেন। তাদের গাড়ি আছে কিন্তু জ্বালানি নেই।’

এএফপি বলছে, শ্রীলঙ্কা তার চাহিদার অবশিষ্ট অংশ তৈরি করতে কাঁচামালসহ ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ৮৫ শতাংশই আমদানি করে থাকে। কিন্তু দেশটি এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য পর্যাপ্ত পেট্রোল এবং অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না।

শ্রীলঙ্কার এক ফার্মেসির মালিক কে. মাথিয়ালাগান এএফপিকে বলছেন, ‘সাধারণ ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক এবং শিশুদের ওষুধের সরবরাহ খুবই কম। গত তিন মাসে অন্যান্য ওষুধের দাম চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।’

মাথিয়ালাগান আরও বলেন, ওষুধ সংকটের কারণে প্রতি ১০টি প্রেসক্রিপশনের মধ্যে তিনটি প্রেসক্রিপশন ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কারণ প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ সরবরাহ করার কোনো উপায় নেয়।

তার ভাষায়, ‘মৌলিক অনেক ওষুধের মজুত পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। ফার্মেসিতে কী ওষুধ পাওয়া যায়, তা না জেনেই প্রেসক্রাইব করেন চিকিৎসকরা।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শ্রীলঙ্কার জনস্বাস্থ্য পরিষেবার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিতে অস্বীকার করেছেন। এই খাতের ওপর জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ নির্ভরশীল। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব মানুষের জীবন জীবন-হুমকির মধ্যে রয়েছে এমন জরুরি অবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে তাদের নিয়মিত অস্ত্রোপচার কমাতে বাধ্য করা হয়েছে।

এছাড়া ওষুধের সংকট থাকায় কম কার্যকর বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করার জন্যও তাদের বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী হানা সিঙ্গার-হামডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার এক সময়ের শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে। সমাজের সবচেয়ে দুর্বলরা সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’

বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার অ্যান্টি-র‌্যাবিস ভ্যাকসিনসহ জরুরি প্রয়োজনের ওষুধের জন্য অর্থ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ভারত, বাংলাদেশ, জাপান এবং অন্যান্য দেশ স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনুদান দিয়েও শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করেছে।

শ্রীলঙ্কার মেডিকেল অফিসারস’ অ্যাসোসিয়েশনের ডা. ভাসান এএফপিকে বলেছেন, যদি এই সংকট আরও প্রলম্বিত হয় তাহলে আরও শিশু মারা যাবে এবং শ্রীলঙ্কায় অপুষ্টি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।’


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর