:: সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার পারভেজ ::
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকাল বেলা দাঁত ব্রাশের পেস্ট থেকে শুরু করে ওষুধ, খাদ্য ও কসমেটিক্স শিল্পে সি-উইড বা সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহৃত হয়। অ্যাগার ও ক্যারাজিনান এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই সামুদ্রিক শৈবাল থেকে পাওয়া যায়। ভালো মানের ১ কেজি অ্যাগারের দাম ৫০০০ ইউএস ডলার। অ্যাগার প্রধানত গ্রেসিলারিয়া ও জেলেডিয়াম থেকে পাওয়া যায়। আর্জেন্টিনা, কানাডা, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং জাপান প্রধান অ্যাগার উৎপাদনকারী দেশ। ক্যারাজিনান সর্বপ্রথম আয়ারল্যান্ডে উৎপাদিত হয়। কনদ্রাস ক্রিসপাস, ইউকিহেমা, কাপ্পা ফাইকাস থেকে ক্যারাজিনান পাওয়া যায়। আমেরিকা, ডেনমার্ক ও ফিলিপাইন বিশ্বে প্রধান ক্যারাজিনান প্রসেসিং এর দেশ। খাদ্য হিসেবে সি-উইড চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। জাপানে ফরফাইরা নোরি, লেমিনারিয়া ও সেক্কাহরিনা কম্বু, উনডারিয়া পিন্নাটিফিডা ও পালমারিয়া পালমাটা ওকামি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের দেশে সারগাসাম, হিপনিয়া, হেলিমেনিয়া, কিউলারপা, হাইড্রোক্ল্যাথরাস, অ্যাম্ফিওরা প্রজাতি সাধারণত বেশি পরিমাণ লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ও মহেশখালী চ্যানেলে সি-উইড চাষ করা হয়। ১৫ দিন অন্তর অন্তর সি-উইড সংগ্রহ করা হয়। একজন কৃষক মাত্র ১২০০ টাকা ব্যয় করে প্রতি মৌসুমে ১২০০০ থেকে ১৪০০০ টাকা আয় করতে পারে। প্রতিমণ শুকনো সি-উইড এর দাম ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা । রাখাইন সম্প্রদায় সি-উইড ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে যুগ যুগ ধরে।
ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সী-উইড হতে পারে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।একদিকে এদেশের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ অন্যদিকে বিশ্ববাজারে এর উচ্চ বাজারদরের কারণে সি-উইড নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা এখন সময়ের দাবি।
সি-উইড কে যথাযথ কাজে লাগানো গেলে এটি আমাদের দেশের ব্লু-ইকোনমির অপার সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
লেখক :: মহাপরিচালক
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট