সাকলাইন আলিফ :
কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বাস্তুুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা আগমনের ছয় বছর পুরন হয়েছে আজ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের মুখে পড়ে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে ১২ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩ টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। কখন তারা স্বদেশে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে সরকারের শরনার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাশন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন ষ্টেটে সন্ত্রাস দমনের নামে সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর জাতিগত নিধন চালানো হলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসতে থাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল। ২৫ আগস্টের পর দুই তিন মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা। এছাড়া কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা সহ ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গুলো নিশ্চিত করা হয়। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরবর্তিতে কয়েক দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি।
রোহিঙ্গাদের দাবী- তাদের নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয়, জায়গা জমি ও গণহত্যার বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে তারা মিয়ানমারে গিয়ে আবারও সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়বে।
ক্যাম্পের মাঝি সহ একাধিক রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও চলছে রোহিঙ্গা গনহত্যার বিচার। তার উপর মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তবে তাদের জতিগত পরিচয় ও অধিকার ফিরিয়ে দিলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবে। তারা চায় সেখানে নিজেদের ভিটে মাটি। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল রাখাইনে পরিদর্শনও করেছেন।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কার্যালয়ের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সবসময় প্রস্তুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে নিজেদের ভিটে বাড়িতে যেতে চায়। তাদের নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্বের দাবিও রয়েছে। তারা কোন মতেই রাখাইনে নির্মিত মডেল ভিলেজে যাবেনা। তিনি জানান সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে নিজেদের ভিটে বাড়িতে প্রত্যাবাশনের জন্য সম্মতি দিয়েছে।
উখিয়া ও টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসের কারণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি সহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান স্হানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান খুন খারাবি মাদক ব্যবসা সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।
তাদের মতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে এখানে পরিবেশ গত সমস্যা হচ্ছে পাহাড় উজাড় হচ্ছে দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশীরা। রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের কারনে বাংলাদেশের নানা চ্যালেন্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে এখানে একটি সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশংকা রয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: মাহফুজুল ইসলাম জানান,বিগত ছয় বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ গোলাগুলিতে দু’শর বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এসময় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে ।
১৩১ টি, মানব পাচারের মামলা হয়েছে ৩৭ টি, মাদক পাচারের মামলা হয়েছে ২০৫৭ টি, ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৯৪ টি, অস্ত্র মামলা হয়েছে ২৩৮ টি, ডাকাতি মামলা হয়েছে ৬২ টি, অপহরণ মামলা হয়েছে ৪৪ টি এবং অন্যান্য অপরাধে মামলা হয়েছে ২৪৩ টি।