প্রায় ১০ দিন পর বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত শান্ত রয়েছে। গেল শনিবার সকাল ৮ টার পর থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্তে কোন ধরনের গোলাগুলি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সীমান্তে কোন মর্টারশেল পাওয়া না গেলেও মিয়ানমার থেকে ভেসে এসেছে হেলমেট ও খাকি পড়া একজনের মরদেহ। এদিকে সীমান্তে গোলাগুলি না হলেও আতংক কমছে না বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্তবাসীর। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন, বিজিবি সহ সীমান্তবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্র মতে, প্রায় ১০ দিন পর গেল শনিবার সকাল থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম থেকে কক্সবাজারের উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত সীমান্ত ঘেষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোন ধরনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তাই ধীরে ধীরে সীমান্ত ঘরে ফিরতে শুরু করলেও তাদের আতংক কমেনি।
এবিষয়ে ঘুমধুমের তুমব্রুর মাঝেরপাড়া গ্রামের আবুল বশর বলেন, প্রায় তিনদিন হবে এই সীমান্তে গোলাগুলি নেই। কিন্তু গেল তিনদিনে এই সীমান্তের ক্ষেত থেকে তিনি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়েছে। এই কারনে সীমান্তবাসী আতংকে আছে।
তিনি আরো বলেন, তাঁরা ক্ষেত খামারে কাজ করতে ভয় পাচ্ছে। কোথায় মাইন পড়ে রয়েছে, কিংবা কোথায় বোমা তার তো কোন হদিস নাই। তাই বাড়ি ফিরে শুরু করলেও লোকজন খুব একটা কাজকর্মে বের হচ্ছে না।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একে. এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি নাই । তবে লোকজন আতংকে রয়েছে।
এদিকে ঘুমধুম মতই আতংকগ্রস্ত উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের লোকজন। এই সীমান্তে একের পর মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে। এপর্যন্ত ( রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা) পর্যন্ত রহমত বিলের সীমান্ত ও খালে ৪ টি মরদেহ দেখতে পেয়েছে স্থানীয়রা। এর মধ্যে পুলিশ দুটি মরদেহ উদ্ধার করেছে। এছাড়া এই সীমান্তঘেষেই মিয়ানমারের ভেতরের অবস্থান রোহিঙ্গী সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও তাঁর সাঙ্পাঙ্গরা। একারণে সীমান্তবাসীদের সর্তক থাকতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিংও করা হয়েছে।
এবিষয়ে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর গফুর বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারী দিন গত রাত থেকে ৬ ফেব্রয়ারী দুপুর পর্যন্ত রহমত বিল সীমান্তঘেষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সীমান্ত দিয়েই ওইদিন মিয়ানমার বিজিপির ১৩৭ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। একই দিন এই সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করে শতাধিক মিয়ানমারের উগ্রপন্থী। সেদিন গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া করে ২৩ জনকে অস্ত্র সহ প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করে। বাকিরা পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর ধীরে ধীরে সীমান্ত শান্ত হলেও আতংক কাটেনি একটুও।
তিনি আরো বলেন, সেদিনের ঘটনার চিহ্ন এখনো সীমান্তে রয়েছে। এই কারণে সীমান্তের কাছাকাছি লোকজন যাতে না যায় সেজন্য মাইকিং করেছি।
অন্যদিকে গত শনিবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মাঝের পাড়া গ্রামের সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। তখন অনেক গুলি এসে লাগে ওই গ্রামের ঘর ও দোকানপাটে। এরপর থেকে সীমান্তে কোন গোলাগুলি না হলে আতংকিত হয়ে লোকজন নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
এবিষয়ে হোয়াইক্যংয়ের চেয়ারম্যান নূর আহমদ আনোয়ারী বলেন, শনিবারের গোলাগুলির পর মানুষ আতংকিত হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবি‘র অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। তবুও যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।