আনছার হোসেন :
ঠিক বিকেল তখন ৩টা। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টারমাকে ল্যান্ড করে দিল্লী থেকে ঢাকাগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ২২৭। এই ফ্লাইটটি ইতিহাসের অংশ হয়ে ভারতের জমিন থেকে বাংলার বুকে বহন করে নিয়ে এসেছে এই জনপদের জননন্দিত নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে। ২০১৫ সালের ১১ মে থেকে এই ২০২৪ সালের ১১ আগষ্ট। সুদীর্ঘ ৯ বছর ৩ মাস একদিন। দীর্ঘ এই দিন-রজনী শেষে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের নির্বাসন থেকে ফিরে এসেছেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অগ্রজ সৈনিক ও তৎকালিন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বুকে ভয় ধরানো বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমদ, যিনি এখন দলটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই নেতা চলে আসেন হাজার হাজার ভক্ত, নেতা-কর্মী আর জনতার সামনে। বিমান বন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে যখন জনতার সামনে এলেন তিনি, তখন সে কী উচ্ছ্বাস, সে কী আবেগ তা এই লেখার ভাষায় বুঝানো অসম্ভব। দীর্ঘ ৯ বছর পর নেতা ফিরে এসেছেন জনতার কাতারে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত, তখন প্রকম্পিত হচ্ছিল বিমান বন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জ ও বাইরের চত্বর। হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে অভিবাদন জানাতে এসেছেন। শুধু ঢাকার নয়, সুদূর কক্সবাজার থেকে ছুটে গেছেন কয়েক হাজার নেতা-কর্মী।
তখন কেমন ছিল সালাহউদ্দিন আহমদের আবেগ-অনুভূতি। ওগুলো বলে বুঝানোর বিষয় নয়। তিনি জনতার কাতারে এলেন, সেই চিরচেনা এক হাসি দিয়ে মুগ্ধ করে দিলেন সবাইকে। তবে এবারের এই হাসি ছিল স্বাধীনতার। দেশ যে নতুন ভাবে স্বাধীন হয়েছে স্বৈরাচারিনী সরকারের হাত থেকে। তিনি ফিরে এসেছেন ‘মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে’।
একজন মানুষ দীর্ঘ ৯ বছর পর মাতৃভূমিতে ফিরবেন। তাঁর কী অপেক্ষার প্রহর মানে! তাই তো তিনি দিল্লীর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে চলে আসেন আজ রোববার (১১ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই। তাঁর ফ্লাইট ছাড়ার কথা বেলা ১১টা ১০ মিনিটে। অবর্ণনীয় সম্মানের সাথে ইমিগ্রেশন পার করে দেয় বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফ্লাইট উড়াল দিতে সময় নেয় আরও আধাঘন্টা। সালাহউদ্দিন আহমদ বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার ঢাকাগামি ফ্লাইটে উঠে বসেন। ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে তাঁকে বহনকারি ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করে আকাশে।
ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বাইরে তখন হাজার হাজার জনতার অপেক্ষা। তাদের নেতা আসছেন ফিরে। তাদের তো উচ্ছাসের শেষ নেই। কারো হাতে প্ল্যা-কার্ড, কারো হাতে প্রিয় নেতার ছবি, আবার কারও হাতে নানা স্লোগান সম্বলিত ব্যানার। কখন আসবেন নেতা! কখন দেখা হবে সেই প্রিয় মুখ!
জনতা আর নেতা-কর্মীদের অপেক্ষার পালা শেষ হয় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে। সালাহউদ্দিন আহমদ বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে আসেন অপেক্ষমান ভক্তদের দুয়ারে। তখন স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় আকাশ আর আশপাশ। সালাহউদ্দিনের মুখে তখন আনন্দ আর আবেগের হাসি। এই হাসি যে অন্য সব হাসির চেয়ে মনোমুগ্ধকর।
ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনও তিনি পার হন সসম্মানে। কর্তৃপক্ষ কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করেন। সে সময় তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও মোহাম্মদ শাহজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আর কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী, শ্রমিক দলের জেলা সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদল সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন প্রমূখ। এছাড়াও জনতার বহরে যোগ দিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলার সব উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্য নেতা-কর্মীরা। ওই সময় সালাহউদ্দিন আহমদের সহধর্মিনী ও সাবেক সাংসদ এডভোকেট হাসিনা আহমেদ, তাঁর বড় ছেলে সাঈদ ইব্রাহিমসহ পরিবারের সকল সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভক্ত নেতা-কর্মীদের অভিবাদন শেষে জনতার উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ ছুটেন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রবর্তক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে। তিনি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
ওই সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই জাতিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বহিঃশক্রর আক্রমণ থেকে এই দেশকে রক্ষা করবো, ইনশা আল্লাহ। আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে এই দেশ যেন হেফাজত থাকে সেই জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের সবচাইতে বেশি দরকার, আমরা সবাই ধৈর্য্য ধারণ করি। শৃংখলা ফিরিয়ে আনি। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি করি। আমরা যেন সকল গোষ্টীর, সমন্ত ধর্ম বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকলকে যেন সমদৃষ্ঠিতে দেখি। আমরা সকলকে যেন বাংলাদেশি হিসেবে দেখি ও মূল্যায়ন করি।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সাড়ে ৯ বছর পর নিজের রাজধানীর বাড়িতে পা রাখেন। সেটাও ছিল এক অভূতপূর্ব মুহুর্ত। আবেগঘন ও ঐতিহাসিক। এমন দিন যে বারবার ফিরে আসে না!