শিরোনাম :
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি বাড়ি পুড়ে ছাই,ক্ষয়ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন ডাকাতের কবলে পড়ে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা ১৬ জেলে ফেরত এনেছে বিজিবি “১ টাকায় হাজার টাকার বাজার” নাফ নদীর মোহনায় স্পিডবোট ডুবি শিশু সহ ২ জন নিখোঁজ, জীবিত উদ্ধার-৮ কক্সবাজারে নাতনির স্বামীর হাতে নানী খুন বিকাশের দোকান চুরিতে ২লাখ ৭০হাজার টাকা উধাওঃব্যথার ওপর সংবাদকর্মী ব্যথা নৌবাহিনীর অভিযান : মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুরি হওয়া কোটি টাকার মালামাল জব্দ মালয়েশিয়া বলে ইনানী সৈকতে শতাধিক রোহিঙ্গাকে রেখে পালালো দালালরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কক্সবাজারের অনেক এলাকায় খাবার পানির সংকট :ইয়াছমিন-রহিমার পানির দুঃখ ঘুচালো হাইসাওয়া

অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় কক্সবাজারের এক নারী প্রধান শিক্ষিকা

নিউজ রুম / ১৪ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :

একটি সিন্ডিকেটের অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকা এক নারী প্রধান শিক্ষিকা সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কক্সবাজার জেলার নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশিদুল জন্নাত কক্সবাজার প্রেসক্লাবে রবিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের ও পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন।

ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশিদুল জন্নাত সংবাদ সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্যে বলেন,সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার পর ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও কর্মচারী সহ সকলেই প্রতিনিয়ত গভীর উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছি।

তিনি বলেন,আমি ১৯৯৫ সালে নভেম্বরের ১ তারিখ ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ২০০৭ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়ে পরবর্তীতে ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।

প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে স্কুলের একাডেমিক সাইডের ক্রমান্বয়ে উন্নয়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মান বৃদ্ধি-সহ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে উপজেলা/জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গৌরব অর্জন করেছে।

এ ছাড়া ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন- শ্রেণিকক্ষ সম্প্রসারণ/নির্মাণ/আধুনিকায়ন, কম্পিউটার ল্যাব,

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরী, ফুলের বাগান, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের সীমানাকে সুরক্ষিত করেছি, মার্কেট সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ওয়াশ ব্লক ও সুপেয় পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়াও, ভূমি খেকোদের নিকট থেকে স্কুলের মূল্যবান ভূমি উদ্ধার করেছি। এই প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করতে আমরা সকলেই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের জন্য এসব করার পরেও একটি চক্র বারংবার গভীর চক্রান্ত করেই চলছে। আমাকে নিয়ে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সমগ্র মানুষকে অবহিত করতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি। আমি একজন নারী হিসেবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও শিক্ষা বিস্তারে নিজের মেধা-মননশীল কাজের মধ্যদিয়ে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ একটা বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে যথাক্রমে জেলা ও উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হয়েছি। এই স্কুলের ছাত্ররা দেশের সেবায় নিয়োজিত। বহু ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন পেশায় আত্মনিয়োগ করে এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। আজ এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের বিষয়ে অবহিত করতে এসেছি। যা ইতোপূর্বে কখনো কামনা করিনি।

:মূল বিষয়‌‌:

আব্দুর রহিম নামের একজন অভিভাবক বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৫ই নভেম্বর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বিষয়ে ২৩/০৩/২০২০ তারিখে কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা করেন।

উক্ত মামলার বিবাদীগণের মধ্য থেকে চারজন অভিভাবক ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ পত্র তৈরি করেন। যেখানে এক কোটি ৭৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা সহ ৩৬ টি অভিযোগ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রচার করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহি অফিসার মহোদয় ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। একই অভিযোগ মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

পরবর্তীতে এই বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এখন যখন দেশের সামগ্রিক পট পরিবর্তন হয় তখন এরা একই বিষয়ে আবার হাজির হয়। ওই ৪ জন অভিযোগকারীর ফর্মুলা নিয়ে। এরা আমার স্কুল এবং আমার বিরুদ্ধে কুৎসামূলক কথা শুরু করে বারবার স্কুলের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে। এসবের পাশাপাশি এবার শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার।

ওই সকল অভিযোগ কারিগণ বিভিন্ন সময় একই অভিযোগ বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং লিফলেট আকারে প্রকাশ করে মসজিদে এবং বিভিন্ন দোকানে রাস্তায় মানুষকে বিলি করে আমাকে অপদস্থ করেন এবং ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মিমাংসিত একটি বিষয় বারবার মানুষের সামনে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন অভিযোগকারীগন।

ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশিদুল জন্নাত আরো বলেন,ঈদগাঁও এলাকার কিছু লোকজন এবং একটা সিন্ডিকেট মিলে আমাকে সরাসরি স্কুলে না যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদর্শন করে আসছে রীতিমত। এমন কি আমি প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ না করলে হত্যা করারও হুমকি দিচ্ছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো- ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে আত্মনিয়োগ করায় কি তাহলে আমার অপরাধ? না হয় তাদের উদ্দ্যেশ কী? নাকি আমি একজন নারী হিসেবে প্রধান শিক্ষক পদে আছি এটাই তাদের কাছে আমার অপরাধ?

কয়দিন ধরে কতিপয় লোক আমাকে এবং আমার পরিবারকে নিয়ে কটাক্ষ করে নানা রকম কুৎসা রটনা করছে এবং লিফলেট বিতরণ করে উসকানি দিচ্ছে।

যদি এদের স্কুলের জন্য ভাল কিছু করার মানসিকতা থাকে। তাহলে আমার এবং আমার পরিবারের চরিত্র হনন ও সম্মান হানি করতে চাইলো কেন? বাজারের মসজিদে লিফলেট বিতরণ করে কি জানান দিতে চাইলো এরা?

তাহলে কি ছাত্রদের আন্দোলনের সুযোগে এই সুযোগ সন্ধানীরা ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার নীল নকশা করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা ইতোপূর্বেও এই স্কুলের বিরুদ্ধে এবং আমার বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা ইস্যুতে সরকারের দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করে বেশ হয়রানি করেছে। যাহা বারবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

আমার প্রশ্ন হলো- কেন? আমি একজন নারী প্রধান শিক্ষক হয়েছি তাই?

নাকি তারা এই স্কুলের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে এমন ষড়যন্ত্র করছে?

একটি স্কুলের সকল নিয়মনীতি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এখানে ব্যাক্তিগত ধারণা প্রতিষ্ঠার অবকাশ নেই। স্কুলের প্রতিটি কাজ ধারাবাহিক ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

তেমনি করে স্কুলের ভৌগোলিক অবস্থান বাণিজ্যিক জায়গায় হওয়ায় অনেকেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বা কমিটির সদস্য হতে চাইলে সরকারের বিধিমত আসতে হয় এখানে প্রধান শিক্ষকের তেমন কোন ভূমিকা নেই। সে অভিমানের পথধরে যে সকল অভিযোগকারী সরকারের দপ্তরে অভিযোগ করেছিলেন তারা তদন্তকারীদের পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় ঠিক একই ইস্যু বানিয়ে ফের আবার স্কুল ও আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নিকট বিচার দাবী করছি।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন,

এই সিন্ডিকেট কোন কারণ ছাড়া ঈদগাঁও এলাকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী দাবীদার হাবিব সহ কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে স্কুলের অভ্যন্তরে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। সেখান থেকে এরা বের হয়ে আচমকা আগেরকার ষড়যন্ত্রকারীদের অভিযোগ নিয়ে ছাপানো লিফলেট বিভিন্ন দোকানপাট এবং মসজিদে বিতরণ করে। এটা কি তাহলে সু-পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও আমাকে হত্যার পরিকল্পনা নই?

প্রধান শিক্ষিকা বলেন,আমি কোন অন্যায় করলে সরকারের বিভাগ তদন্ত করুক। কিন্তু এভাবে একটা প্রতিষ্ঠানকে বারংবার টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের নিকট আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে ও দুর্নীতিবাজ হিসাবে উপস্থাপন করে এরা কি বুঝাতে চায়?! তাছাড়াও, এরা আমার পদত্যাগ দাবি করে বর্তমানে বিদ্যালয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়।

তিনি বলেন,আমি আমার স্কুলের সকল অভিভাবক সহ এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে এই সকল ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সজাগ থেকে শিক্ষার মানকে আরো তরান্বিত করে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক, শ্রীমতি পুনাম পাল, শাহজালাল মুনির, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলম ছাড়াও বেশ কিছু ছাত্র এবং অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর