বিডি প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১২৩ সদস্যকে চতুর্থ দফায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আজ রবিবার দুপুর একটার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে মিয়ানমার থেকে আসা জাহাজে করে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
একই দিনে মিয়ানমারের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় মুক্তি পাওয়া ৮৫ বাংলাদেশি নাগরিক কক্সবাজারে নিয়ে এসে হস্তান্তর করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির কক্সবাজারের আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল হাসান বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কক্সবাজারের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. রাহাত বিন কুতুব উপস্থিত ছিলেন।
এ উপলক্ষে দুপুরে কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএর ঘাট এলাকায় মিয়ানমার বিজিপি ও সেনা সদস্যদের গ্রহণ করতে আসা মিয়ানমার বিজিপি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের বিজিবি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এর আগে আজ সকালে একাধিক গাড়িতে করে তাঁদের সবাইকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটার বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাটে নিয়ে আসা হয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘাতের মধ্যে গত দুই মাসে কয়েক দফায় নাফ নদী অতিক্রম করে সে দেশের সেনাবাহিনী এবং বিজিপির ১২৩ সদস্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের টেকনাফের দমদমিয়া এলাকার একটি বহুতল ভবনে রাখা হয়।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ৮৫ বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে গতকাল শনিবার সিটওয়ে বন্দর থেকে মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ‘ইউএমএস চিন ডুইন’ কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। আজ সকালে জাহাজটি কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএর ঘাটে পৌঁছে। সেই জাহাজে করেই বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপির ১২৩ সদস্য ফিরে গেছে।
মিয়ানমার থেকে ফিরেছে ৮৫ বাংলাদেশি ।
রবিবার সকালে কক্সবাজার বিআইডব্লিউটি ঘাটে মিয়ানমার থেকে কারা ভোগ করে ফিরে আসা টেকনাফের বাসিন্দা বদিউল আলম বলেন, ভাই ওখানে অনেক কষ্টে ছিলাম। আমাদেরকে সারা দিনে একটা মাত্র শুটকি দেওয়া হতো। সেটা খেয়ে সারাদিন থাকতে হতো। অনেক কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেছি।
মিয়ানমার থেকে ফিরে আসা নরসিংদীর বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, কক্সবাজার বেড়াতে এসে , অপহরণকারীরা আমাকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার পথে মিয়ানমারের নৌবাহিনী আমাদের আটক করেন, এরপর থেকে কারাগারে ছিলাম। সেখানে আমাদেরকে খুব অল্প খাবার দেওয়া হতো।
মিয়ানমার থেকে ফিরে আসা কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা আজিম উল্লাহ বলেন, সারাদিনে একবার খাবার দেওয়া হত মিয়ানমারের কারাগারে। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে ছিলাম। ভাত সহজে পাওয়া যেত না।
মিয়ানমার থেকে ফিরে আসা টেকনাফের বাসিন্দা আবু আলম বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে খুবই অমানবিক আচরণ করেছে। আমাদের খাবার দেওয়া হতো না। আজ দেশে ফিরে এসে মনে হচ্ছে বেহেস্তের মধ্যে পৌঁছে গেছি।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ,না,ম হেলাল উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের যেসব বিজিপি ও সেনা সদস্যরা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকে অনেক ভালোভাবে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। অথচ মিয়ানমার, আমাদের বাসিন্দাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। এটার জন্য মিয়ানমার কে চিঠি দিয়ে জবাব চাইতে হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাসদস্যদের ফেরত পাঠানোর সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ১২৩ জনের মধ্যে সেনাসদস্য রয়েছেন ১৫ জন, বাকিরা বিজিপির সদস্য। এর আগেও তিন দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি ও মিয়ানামার সেনাবাহিনীর ৭৫২ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ৮৫ বাংলাদেশির বাড়ি কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও ঢাকা জেলায়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সাগরে মাছ ধরার সময় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। এর বাইরে বাকিরা বিভিন্ন সময় সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এর আগে গত ৯ জুন মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরেন ৪৫ বাংলাদেশি। গত ২৫ এপ্রিল ফেরেন আরও ১৭৩ জন।