বিডি প্রতিবেদক :
তদন্তে গাফলতি ও অবহেলা এবং আদালতে ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র দেওয়ায় কক্সবাজার সদর থানার সাবেক ইন্সপেক্টর ( অপারেশনস্) মো. মাঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম জেলার অপরাধ তদন্ত বিভাগ ( সিআইডি)তে ইনস্পেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সোমবার ( ২৯ আগষ্ট ) বিকেলে একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার অভিযোগপত্রে নানা ত্রুটি ও তদন্ত কর্মকর্তা ওসি মাঈন উদ্দিনের গাফলতি দেখে কক্সবাজার চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী ওই আদেশ দেন। আদেশের কপিটি বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালকের (আইজিপি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর থানার তৎকালীন এসআই রাজীব কান্তি নাথ বাদী হয়ে ৩ জনকে আটক ও ৩ জন পলাতক আসামীর নাম উল্লেখ করে ১২/১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা করেন।
ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলীর ইউসুলের ঘোনার মৃত আবদুর রশিদ ড্রাইভারের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত (২৩) ঈদগাঁওয়ের শিয়াপাড়ার সৈয়দ হোসেনের ছেলে মো. আবু নাসের (২৮) সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের লারপাড়ার আহমদ ছফার ছেলে মো. রোহেল (২১)। এছাড়া পলাতক হিসেবে ওই মামলার এজাহারে থাকা অন্য তিন আসামীরা হলেন, পাহাড়তলীর ইউসুলের ঘোনার মৃত আবদুর রশিদ ড্রাইভারের ছেলে ওয়াসিম (৩০) ও একই এলাকার নেজামের ছেলে পেঠান এবং দক্ষিণ পাহাড়তলীর মোহাম্মদ ছিদ্দিকের ছেলে আবদুর রহিম (৩০)। পরে সদর থানার তৎকালীন ওসি ( অপরাশেনস্) মো.মাঈন উদ্দিন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর আদালতে এজাহার নামীয় ৬ আসামী সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর আদালতে দাখিল করেন।
অভিযোগ শুনানীকালে আদালতের পর্যবেক্ষণ মতে, এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও যে ৬ জনকে অভিযোগপত্রে আসামী করা হয়েছে
তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে কোন বক্তব্য তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রদান করেননি। এমনকি ওই ৬ জনের নামও সাক্ষীরা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রকাশ করেননি। তাছাড়া এস.আই মোঃ আবদুর রহিম-কে অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে রাখা হলেও ১৬১ ধারায় তার কোন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া আদালত অভিযোগপত্রে ও তদন্তে আরো অন্যান্য ত্রুটি লক্ষ্য করেন।
পর্যাবেক্ষণে আরো রয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে চরম অবহেলা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছেন। তিনি কেন এবং কীভাবে সন্দিদ্ধ ৬ জন আসামীকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্তি করেছেন তা আদালতের নিকট বোধগম্য হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তার এ ধরণের কার্যক্রম কাম্য নয়। তার এ ধরণের অবহেলা, ত্রুটি ও বিচ্যুতির বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসা আবশ্যক মনে করেছেন আদালত।
এবিষয়ে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আশেক ইলাহী শাহাজাহান নূরী বলেন, অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে আদালত এজাহারনামীয় ৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেও বাকি আসামীদেরকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, তদন্তে গাফলতি, অবেহেলা এবং নানা ত্রুটিতে ভরপুর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন (ইন্সপেক্টর) এর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী। আদেশের কপি আইজিপিকে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র ইনস্পেক্টর ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালের সেই অভিযোগপত্রের স্বাক্ষীদের ১৬১ ধারার জবানবন্দীতে কি রয়েছে সেটা আমার মনে নেই। আদালতের আদেশের বিয়টি আমার জানা নেই।