বিডি প্রতিবেদক :
টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসার পথে ইয়াবা না পেয়ে এক প্রবাসীকে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সাগর তীরের মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ বাহারছরার শীলখালী চেকপোস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা তাকে অমানবিক নির্যাতন করেছেন। আহত প্রবাসীকে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোররাত দুইটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে। তাকে রাত ১১টার দিকে কক্সবাজার বাসটার্মিনাল এলাকায় সড়কের পাশ হতে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ৯টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের শামলাপুর চৌকিদারপাড়া শীলখালী বিজিবি চেকপোস্টে তাকে নিপীড়ন চালানো হয়।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ ঘটনায় জড়িত চেকপোস্টে ওইসময় দায়িত্বপালনকারি সবার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি-২ টেকনাফ ব্যাটালিয়ন।
মারধরের শিকার প্রবাসী আবদুল্লাহ (৩৫) টেকনাফ উপজেলা সদরের কাইয়ুক খালী পাড়ার মৃত শফিউজ্জামানের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত প্রবাসী আবদুল্লাহ বলেন, কিছু দিন আগে মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসেছি। আমার সংসারে দু’স্ত্রীর প্রথমজন টেকনাফে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী কুমিল্লায় থাকে। কুমিল্লা থেকে মঙ্গলবার টেকনাফে এসেছিলাম মায়ের কবর জিয়ারত করতে। কবর জিয়ারত শেষে প্রথম স্ত্রী থেকে বিদায় নিয়ে সন্ধ্যায় টেকনাফ থেকে নীলদরিয়া নামের বাস করে কক্সবাজার ফিরছিলাম। পথে শীলখালী বিজিবি চেকপোস্টে পৌঁছালে, বিজিবির এক সদস্য আমার দেহ তল্লাশি করে। কিছু না পেয়ে একটি গোপন কক্ষে নিয়ে উলঙ্গ করে তল্লাশি করে।
তিনি আরো জানান, এ সময়ও বিজিবির সদস্যরা কিছু না পেয়ে, তুর কাছে ইয়াবা আছে বলে আমাকে থাপ্পর মারে। স্যার আমার কাছে কিছু নেই, এমনটি বলার পর লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। কিছুক্ষণ মারধরের পর একটি খালি জায়গায় নিয়ে ইয়াবা আছে বলে বলপ্রয়োগ করে মলত্যাগ করান। এতেও ইয়াবা না পেয়ে বিজিবির দুই সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে ‘শালার ব্যাটা তোর কাছে ইয়াবা আছে’ বলে আবারো মারধর শুরু করেন। জীবনের প্রথম এমন মার খেয়ে এক সময় অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর রাত ১১টার দিকে আমাকে আবিস্কার করি কক্সবাজার বাসটার্মিনাল এলাকায়।
কক্সবাজার টার্মিনাল এলাকায় রাতে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা আবদুল্লাহকে উদ্ধার করা স্থানীয় সমাজকর্মী শামসুল আলম শ্রাবণ বলেন, টার্মিনালের থাকা মোটরযান শ্রমিকরা জানান একটি গাড়ি এসে অকস্মাত এক লোককে টার্মিনালে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে চলে যায়। কাছে গিয়ে দেখি লোকটি অচেতন। তবে, প্রাণ আছে দেখে তাকে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হয়। উদ্ধারের পর জানতে চাইলে লোকটি তার নাম আবদুল্লাহ বলে জানান। বলেন, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসার পথে ইয়াবা না পেয়ে তাকে বিজিবি চেকপোস্টে মারধর করা হয়েছে। মার সহ্য করতে না পেরে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আর কিছুই জানি না। তার শরীর জুড়ে মারের চিহ্ন বিদ্যমান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়, যোগ করেন শ্রাবণ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, সারা শরীরে মারের রক্তাক্ত জখম নিয়ে এক যুবককে রাতে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। তাকে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কে মেরেছে তা জানি না, তবে এখনো তিনি শতভাগ শংকামুক্ত নন।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মো. ইফতেখার জানান, ঘটনার বিষয়টি আমাদের কাছে খবর আসার পর প্রথমে অভিযুক্তদের ব্যাটালিয়ন সদরে নিয়ে আসা হয়। পরে যাচাই করে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিজিবি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি অপেশাদারি আচরণ- ব্যক্তির দায় বাহিনী নেয় না।
তিনি আরো জানান, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যাপারেও খোঁজ নিয়েছি আমরা। তার যাবতীয় ব্যয় বিজিবি হতে দেয়া হবে বলে জানিয়েছি। ###