শিরোনাম :
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি বাড়ি পুড়ে ছাই,ক্ষয়ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন ডাকাতের কবলে পড়ে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা ১৬ জেলে ফেরত এনেছে বিজিবি “১ টাকায় হাজার টাকার বাজার” নাফ নদীর মোহনায় স্পিডবোট ডুবি শিশু সহ ২ জন নিখোঁজ, জীবিত উদ্ধার-৮ কক্সবাজারে নাতনির স্বামীর হাতে নানী খুন বিকাশের দোকান চুরিতে ২লাখ ৭০হাজার টাকা উধাওঃব্যথার ওপর সংবাদকর্মী ব্যথা নৌবাহিনীর অভিযান : মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুরি হওয়া কোটি টাকার মালামাল জব্দ মালয়েশিয়া বলে ইনানী সৈকতে শতাধিক রোহিঙ্গাকে রেখে পালালো দালালরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কক্সবাজারের অনেক এলাকায় খাবার পানির সংকট :ইয়াছমিন-রহিমার পানির দুঃখ ঘুচালো হাইসাওয়া

বড় মন ও মননের সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী…

নিউজ রুম / ২৩ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

পলাশ আহসান :

গত মাসে বাড়ি গিয়ে শুনলাম সুভাষ দা হাসপাতালে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম শুনলেই আমার আতঙ্ক লাগে। তবু বন্ধুবর সাংবাদিক উজ্জ্বলের সঙ্গে গেলাম দাদাকে দেখতে। হাসপাতালের নিয়ম কানুন মেনে দাদার ঘরে ঢুকলাম। মিনিট দশেক ছিলাম তাঁর বিছানার পাশে। বিশেষ কেয়ারে ছিলেন। সহজেই চিনলেন।

আমি কথা বলতে না চাইলেও তিনি হেসে হেসে কথা বলতে শুরু করলেন। একটু জড়ানো, তবু আমি পরিস্কার বুঝলাম তাঁর কথা। কোথায় কাজ করছি এখন কী পদে আছি কেমন বুঝছি এখনকার সাংবাদিকতা। নানান কথা। আমার পরিবারের সবার খবর নিলেন। ওই অবস্থায়ও আমার আব্বার মৃত্যুর সমবেদনা জানাতে ভুললেন না। হাত ধরে আর্শিবাদ করলেন। তাঁর জন্য দোয়া করতে বললেন।

কথা তখনো শেষ হয়নি তখন একজন নার্স এসে বললেন ওনাকে বেশি কথা না বলাতে। আমি বুঝলাম তাই দ্রুত বিদায় নিলাম। তখনো একটা স্মিথ হাসি লেগে ছিল দাদার মুখে। এখনো চোখে ভাসছে হাসিটা। আমার স্মৃতিতে সুভাষ দা এমনই। আমার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কোন খারাপ স্মৃতি হয়নি।

ছাত্র অবস্থায় সাংবাদিকতা করতাম সাতক্ষীরায়। দৈনিক কাফেলা নামে একটি পত্রিকায় কাজ করতাম। তিনজন মানুষ আমাকে সবসময় কোন গণমাধ্যমের জেলা প্রতিনিধি হতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। বলতেন “এই নেশা ধরে গেলে ছাড়তে পারবে না, লেখাপড়া শেষ করো, তারপর সাংবাদিকতা করতে হলে ঢাকায় গিয়ে কর” বাকি দু’জনের নাম এখানে বলছি না। কখনো বলবো কোথাও আনুষ্ঠানিক ভাবে।

সুভাষ দা অন্যতম ছিলেন আমাকে যারা ঢাকায় আসতে বলেছিলেন সাংবাদিকতার জন্যে। যখন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, লেখালেখি সাংবাদিকতা বড়জোর রাজনীতি, এর বাইরে কোন আলাপ নেই। তুমুল আড্ডা দিয়েছি তাঁর সঙ্গে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, কিন্তু কখনো প্রসঙ্গ বদলাননি। মনে আছে একবার সাপ্তাহিক ছুটির ঈদ সংখ্যা আমার একটা ছোট গল্প ছাপা হয়েছিলো। তাঁর কী যে আনন্দ দেখেছিলাম সেদিন। আমি নিজেও বোধহয় এতটা আনন্দ পাইনি।

এই হচ্ছেন সুভাষ দা। যারা কাজ করতে চাইতো, তাদের পছন্দ করতেন। উৎসাহ দিতেন। নিজে কাজে ডুবে থাকতেন সারাক্ষণ। তাঁর কাছে সবচেয়ে যেটা শেখার সেটা হচ্ছে, গুছিয়ে সাংবাদিকতা করা। আমি তাঁকে গুগলবিহীন সময় থেকে চিনি। সেই সময় তাঁর কাছে সব আছে। তাঁর কাছে ছিল বিশাল নোটবুকের আর্কাইভ। বছরের পর বছর ধরে জমানো পত্রিকা তো ছিলই। এখনো দাদার খাকি কাভারের নোটবুকে কালির কলমে নোট নেয়ার ছবি চোখে ভাসে। আক্ষরিক অর্থেই মুক্তর মত স্বচ্ছ ছিলো দাদার হাতের লেখা।

আমি সুযোগ পেলেই চুপচাপ তাঁর লেখা দেখতাম। তিনি লিখতেন এফোর সাইজ কাগজে। সামনে থাকলে আমাকে জোরে পড়তে বলতেন। বলতেন “আরেক হাতে চেক হলে কিছু না কিছু ইতিবাচক বদল হয়”। হতোও তাই। নিউজ তিনি কাঠামোগত ভাবেই লিখতেন। কিন্তু ফিচার লিখতেন অসাধারণ। ফিচারের মূল বিষয় যে মানবিক আবেদন সেটা অ্যাকাডেমিক্যালি পড়ার আগেই শিখেছিলাম সুভাষ দার লেখা পড়ে।

সুভাষ দা’র সঙ্গে আমার আরেকটা সম্পর্ক ছিলো। সেটা পারিবারিক। আমার বাবা এবং তাঁর জন্ম একই গ্রামে। একই স্কুলে লেখাপড়া। গ্রামটি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আন্দুলিয়া ইউনিয়নে। আমরা দেশের বাড়ি বলে অভ্যস্ত। অসম্ভব সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির ওই গ্রামের আরো দুই ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন আমার ছোট দাদা এবং সুভাষ দার বাবা। সেই সূত্রে আমার বাবাকে তিনি খুড়া বা কাকা ডাকতেন। বয়স কাছাকাছি হলেও তাঁদের সম্পর্কটাও ছিলো বন্ধুর মত।

পারিবারিক এই গল্পটি বললাম শেষ কথটি বলবো বলে। বছর পাঁচেক আগে একটি বেসরকারি সংগঠন আমাকে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জে ডেকেছিলো সাংবাদিকতার ট্রেনিংএ। আমি ট্রেনর, অংশগ্রহণকারী সাতক্ষীরার সাংবাদিকরা। এদের মধ্যে সুভাষ দা’ও ছিলেন। শুরুতে দু’জন সিনিয়র সাংবাদিক অংশগ্রহণকারীর তালিকায় নাম তুললেও চলে গেলেন, ফিরলেন শেষ হলে। যাওয়ার সময় তারা আয়োজকদের বলেছিলেন ” কী আর শেখাবে এই সব হাঁটুর বয়সী পোলাপান ” অথচ সুভাষ দা
সেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্যদের নিয়ে বসেই ছিলেন মনোযোগী ছাত্রের মত। মুখে সেই বিখ্যাত হাসি। পুরো ট্রেনিংএ সবার চেয়ে বেশি অংশগ্রহণ তাঁর ছিলো।

এই হচ্ছেন সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী। তাঁর মত সাংবাদিকরা ভালো মন ও মননের কারণে সব সময় আলাদা ভাবে চিহ্নিত হন। তাঁদের কথা সবাই শ্রদ্ধাভরে মনে রাখে।

পলাশ আহসান
সহযোগী প্রধান বার্তা সম্পাদক
একাত্তর টেলিভিশন


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর