বিডি প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন।
সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উচ্ছেদ পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এসময় সৈকতের বালিয়াড়িতে অবৈধভাবর উড়ে উঠা ৪ শতাধিক স্থানপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন কউক সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর রাশেদ।
তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত উন্মুক্ত রাখতে যেকোন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে করতে ২০১১ সালে একটি আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ আগস্ট ১৪২ নাম্বার কনটেম্প মামলায় (৬২৬ নাম্বার রীট মামলার) উচ্চ আদালতের আদেশ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে তামিল প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হয়। একই সাথে ব্যবসায়ীদের দায়ের করা রীট মামলা প্রত্যাহার করে নেয় আদালত।
তিনি বলেন, আদালতের আদেশের পর আর প্রতিবন্ধকতা না থাকায় আজ (সোমবার) সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা এবং কলাতলী পয়েন্টের ৪১৭টি ঝুপড়ি দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
তবে, ব্যবসায়ীদের দাবি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি পরিবেশবাদী সংগঠন “হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচ আরপিবি) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুন্দর্য রক্ষার্থে সৈকত থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগরে রিট পিটিশন নং ৬২৬/২০১১। ১০ জানুয়ারি কক্সবাজার সৈকত এলাকার সৌন্দর্য ও প্রাকৃতকি পরিবেশ বিনষ্টকারী সকল অননুমোদিত স্থাপনা ২৪ জানুয়ারির মধ্যে অপসারন করে আদালতকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী এবং বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয় গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। একই সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১০জনকে এ রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে দখল উচ্ছেদ করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু গত ১১ বছরেও উচ্চ আদালতের এ রায় কার্যকর করা হয়নি।
সম্প্রতি, হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশন নং ৬২৬/২০১১ এর আদেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ এনে বাদী হাইকোর্টে কনটেম্পট মামলা (১৪২/২০২২) দায়ের করেন। উক্ত মামলার শুনানি শেষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে আগামী ১৯ অক্টোবর স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। একই সাথে পুলিশ সুপারসহ চারজনের বিরদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়। অবৈধ দখলদারদের করা অন্য সকল রিট মমালার স্থিতাবস্থাও প্রত্যাহার করে নেয় হাইকোর্ট। ফলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় আজ সোমবার সকাল থেকে সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: আমিন আল পারভেজ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ান, জেলা পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার কোন সুযোগ নেই। উচ্ছেদের আগে দখলদারদের জানানো হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের পুন:বাসনের বিষয়টি চিন্তায় নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে সৈকতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। স্বস্তি ফিরেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝেও।
কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সৈকতে অবৈধ স্থাপনার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হয়েছে বেশি। একই সাথে ঐ স্থানটি পর্যটকদের জন্য বিরক্তিকর জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ অবস্থায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমরা সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছি। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ উচ্ছেদের ফলে সৈকতের সৌন্দর্য ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে, কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা জয়নাল আবেদনী।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের দায়ের করা একটি রীট মামলায় আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উচ্ছেদ না করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন উচ্চ আদালতের আদেশ না মেনে এবং আমাদের কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীর।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, কক্সবাজারকে আধুনিক, আকর্ষণীয়, পরিকল্পিত এবং স্বাস্থ্যকর পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ধীরে ধীরে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। দখলদার যেই হোক না কেন কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।
#####