শিরোনাম :
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি বাড়ি পুড়ে ছাই,ক্ষয়ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন ডাকাতের কবলে পড়ে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা ১৬ জেলে ফেরত এনেছে বিজিবি “১ টাকায় হাজার টাকার বাজার” নাফ নদীর মোহনায় স্পিডবোট ডুবি শিশু সহ ২ জন নিখোঁজ, জীবিত উদ্ধার-৮ কক্সবাজারে নাতনির স্বামীর হাতে নানী খুন বিকাশের দোকান চুরিতে ২লাখ ৭০হাজার টাকা উধাওঃব্যথার ওপর সংবাদকর্মী ব্যথা নৌবাহিনীর অভিযান : মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুরি হওয়া কোটি টাকার মালামাল জব্দ মালয়েশিয়া বলে ইনানী সৈকতে শতাধিক রোহিঙ্গাকে রেখে পালালো দালালরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কক্সবাজারের অনেক এলাকায় খাবার পানির সংকট :ইয়াছমিন-রহিমার পানির দুঃখ ঘুচালো হাইসাওয়া

সরষে ফুলে মাঠ ভরেছে, ছড়িয়ে হলুদ রং

নিউজ রুম / ২৫ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

মুকুল কান্তি দাশ :
“সরষে ফুলে মাঠ ভরেছে, ছড়িয়ে হলুদ রং’ কৃষকের দু:খ ভুলে গেছে সুখের গান, মনের মতো ফসল তুলে ভরবে তাদের মন, দু:খ রহিবে না আর কাটবে দেনার ভার”। কবির এই কথার সাথে কৃষকের মনেরভাব অনেকটা মিলে গেছে। কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিস্তীর্ণ জনপদে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন জনপদে ৪শত তিন হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। পুরো বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ছেয়ে গেছে হলুদের রংয়ে। সবুজের মাঝে হলুদের মেলা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। সরিষা ক্ষেতের দৃশ্য যেন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি প্রেমিদের।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল ফলনের আশাও করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেতে সরিষার ফুলও ফুটেছে। খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় পতিত জমিতে বাড়তি ফসল তুলতে সরিষার চাষাবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। সেইসঙ্গে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় পরিবারের তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়াসহ সঠিক সময়ে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। উপজেলা কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মনিটরিংয়ের কারণে বর্তমানে সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি প্রণোদনা ও বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিগত বছরের তুলনায় অর্ধেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা ও কম খরচে স্বল্প সময়ে সরিষা চাষাবাদে লাভজনক হওয়ায় এ চাষের দিকে ঝুকছে প্রান্তিক কৃষকরা। গ্রামের বেশির ভাগ পতিত জমিতে সরিষা চাষ করে এবছর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বহু কৃষকেরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, কোনাখালী, বরইতলী, ডুলাহাজারা, চিরিংগা ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন চারশত তিন হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। সরিষা চাষের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝখানে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিগত তিন বছর ধরে ভোজ্য তেলের দাম ক্রমশবৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা পুনরায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
সাহারবিল এলাকার কৃষক দুদু মিয়া বলেন, বিগত ৩-৪ বছর ধরে সরিষার আবাদ করে আসছে। তিনি এ বছরও ৩ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গেল বছর সরিষার মণ ছিল ২হাজার ৫শত থেকে তিন হাজার টাকা। এবার দাম আরও বেশি পাবো বলে আশা করছি। প্রতি কানি জমিতে সরিষা চাষে সার,বিষসহ তার খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবছর সরিষার ভাল ফলন হওয়ার খুবই সম্ভবনা।
ডুলাহাজারা এলাকার প্রান্তিক কৃষক আবদুল মতলব জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি বছরে ২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন তিনি। নিজের জমিতে কয়েক বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হয়ে আসছেন কৃষক আবদুল মতলব। তিনি বলেন, কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য চাষের পাশাপাশি জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) রাজীব দে বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকাসহ ৪শত ৩ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। যা বিগত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। যার কারণ হচ্ছে, বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকেছে। একদিকে যেমন লাভবান হবে অন্যদিকে সরিষা আবাদের ফলে কৃষকের তেলের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়াও তিন ফসলি জমি চার ফসলিতে রূপান্তরিত হবে। এবং পতিত জমি ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অত্র উপজেলাটি কৃষি প্রধান হিসেবে বিবেচ্য। এখানে নানা জাতের সবজি আবাদের পাশাপাশি সরিষারও আবাদ হয়। বর্তমান সরকার সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে প্রনোদনা প্রদান, বাজারে সরিষার ভালো মূল্য পাওয়া, নতুন নতুন উন্নত জাতের উদ্ভাবনের ফলে ফলন বৃদ্ধি এবং পতিত জমিতে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষের মাধ্যমে লাভজনক হওয়ার কারনে কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশী জাতের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে লাভ বেশি হয়। তাছাড়া সরিষা চাষে খরচ কম ও বেশি পরিশ্রম এবং পরিচর্যা করা লাগে না। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা চাষে এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর