বিডি প্রতিবেদক টেকনাফ :
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকে উপস্থাপন করা সম্পদ বিবরণীতে সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের সাথে সোয়া চার কোটি টাকা অসঙ্গতিপূর্ণ ভাবে অর্জনের অভিযোগে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এ মামলা করা হয়েছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) কক্সবাজারের উপসহকারি পরিচালক নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদি হয়ে এ মামলা করেছেন। এটি সজেকা কক্সবাজারের ৩য় মামলা। ২০১৪ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে তার আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখে এ অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে।
আসামী মো. মনিরুজ্জামান (৪৭) টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার স্কুল রোড় এলাকার মৃত হোসেন আহম্মদের ছেলে। তিনি বর্তমানে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মনিরুজ্জামান কর্তৃক দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ২৫৬ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৩ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন করার তথ্য মিলেছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের উপসহকারি পরিচালক নাছরুল্লাহ হোসাইন বলেন, দুদক, সজেকা, চট্টগ্রাম-২ এর ই/আর নং-২৮/২০১৭ এর অনুসন্ধানকালে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এতে দুদক, প্রধান কার্যালয়ের আদেশমুলে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারী করা হয়। তিনি সময় চেয়ে ২০১৯ সালের ১৫ মে দুদক, সজেকা, চট্টগ্রাম-২ এ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। উক্ত বিবরণী মনিরুজ্জামান তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৬ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ২৫৬ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০১২-১৩ হতে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৯ হাজার ১২ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ৩০৯ টাকা। সে মতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ৪ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৩ টাকা মূল্যের সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন করেন। যা দুদক আইনে শান্তিযোগ্য অপরাধ।
তাই দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) যারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলাটি অনুমোদন দিয়ে নথিভুক্ত করেছেন দুদক সজেকা কক্সবাজারের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম।
দুদক সজেকা কক্সবাজারের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর হতে ২০১৯ সালে ১৫ মে পর্যন্ত সময় তার আয় খতিয়ে দেখে সোয়া চার কোটি টাকার অসঙ্গতি আয় মিলেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। এটি কক্সবাজার কার্যালয়ের তয় মামলা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার আতিকের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে এখানকার যাত্রা শুরু হয়। দ্বিতীয় মামলা করা হয় ‘ইয়াবা কুইন’ খ্যাত রোজিনা নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। তৃতীয় মামলার আসামি হলে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান।
অভিযুক্ত কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ২০০৭ সাল হতেই আমার আয়কর ফাইল চলমান। যা আয়-ব্যয় সব সেখানে নথিভুক্ত আছে। কোন আয় লোকায়িত নেই। দুদক যেভাবে চেয়েছে সেভাবে সম্পদ বিবরণী দিয়েছি, কিছু লুকায়নি। এরপরও তারা আমার অবৈধ সম্পদ পেয়ে মামলা করে থাকলে আইনী ভাবে তা মোকাবিলা করবো।